ময়নাতদন্ত
হঠাৎ
করেই রাত্রে ৩ টার দিকে
কলেজের মর্গ থেকে কল
আসল। কল আসা নিয়ে
আমি ততটা অবাক হই
নি অবাক হয়েছি এ
নিয়ে যে, আমাকে এখনি
লাশের ময়নাতদন্তের জন্য যেতে হবে।
কিন্তু, আমরা ময়নাতদন্ত সাধারানত
দিনে করে থাকি। পুলিশের
উপর মহল থেকেও কল
করে আমাকে সেটাই বলা হল। কি
আর করার অনিচ্ছা সত্ত্বেও
করতে হবে। তড়িঘড়ি করে রেডি হয়ে
কলেজে গেলাম।
সেখানে,পুলিশের উর্ধতন অনেক কর্মকর্তাই উপস্থিত।
এই কেইসটা নিয়ে সবার এত
মাথাব্যাথা কেন বুজতে পারলাম
না। মর্গে ঢুকতেই দেখলাম, আমার বাল্যকালের এক
ফ্রেন্ড তাজ সেখানে আছে,পুলিশের এস.পি সে।
তার কলেই আসা মুলত।
তার সাথে আলাপচারিতা করতে
করতেই লাশের উপর থেকে চাদর
সরালাম। লাশের দিকে তাকাতেই ১২৬
টি ময়নাতদন্ত করা এই হাত
পর্যন্ত কেপে উঠল। কিভাবে পারে
একজন মানুষ অন্য মানুষকে এভাবে
খুন করতে !!!
লাশটি
একটি মেয়ের। মেয়েটির চেহারাটা খুবই মায়াবি দেখতে,
কিন্তু ক্রিমিনালদের কাছে মায়া, ভালোবাসা
এসব ছাইপাশ ছাড়া কিছু না
। ময়নাতদন্তের কিছু ভাগ আছে
। সবগুলো দিক সম্পুর্ন করেই
একটি লাশের রিপোর্ট দেয়া হয় । আমিও
সেই ভাবে ভাগ অনুসারে
বলছিলাম আর আমার অধীনে
কাজ করা এক ইন্টার্ণ
সেগুলো নোট করছিল । মেয়েদের
লাশ সাধারনত প্রথমেই পুরোপুরি অনাবৃত করা হয় না
। যেই পার্টের ময়নাতদন্ত করা হয় শুধু
সেই অংশই করা হয়
। মেয়েটির বুকের অংশের দিকে যেতেই দেখলাম
মেয়েটির দুটো স্তনই কাটা,
বুক থেকে মাঝ বরাবর
ছুড়ি দিয়ে নাভী পর্যন্ত
গভীর ক্ষতের চিহ্ন । মেয়েটির যৌনাংগ ভারী কিছু দিয়ে
থেতলে দেয়া । খুব নৃশংস ভাবে হত্যা করা
হয়েছে মেয়েটিকে । মেয়েটির চোয়ালের হাড় দেবে রয়েছে,
ঠোঁট কাটা, গলায় দাতের কামড়ের
চিহ্ন, স্বভাবতই রেইপ করা হয়েছে
মনে হয়, তবে টেস্ট
করা সম্ভব না জরায়ু পরিক্ষা
ছাড়া, আর যেটা দেখে
এতক্ষন খারাপ লাগছিল যে মেয়েটির মাথার
চুলগুলো গোড়া থেকে উপড়ে
ফেলা এটা এখন স্বাভাবিক
এ মনে হচ্ছে । সাথে
দাড়িয়ে থাকা মেয়েটির চক্ষুও
ছানাবড়া অবস্থা । তার চোখের পানি
লুকানোর বৃথা চেষ্টা আমার
চোখ এড়ায়নি।শেষমেশ জিজ্ঞেস করেই ফেলল আমাকে,
>স্যার?
>হুম
বল।
>স্যার,
কিভাবে পারে......
>কিভাবে
একজন মানুষ অন্যজনকে এভাবে হত্যা করে....? তাইতো?
>জ্বি
স্যার।
>দেখ,
একজন ক্রিমিনালের মধ্যে যদি তুমি ভালো
জিনিস আশা কর তবে
তুমি ভুল । কিন্তু নৃশংসতা আশা করাটাই স্বাভাবিক
তবে এতটা নৃশংসতা কেন
সেটা বের করতে হবে
মনে হয় কেননা যদি
নির্দিষ্ট ভাবে একজনের সাথে
হয়ে থাকে তাহলে মেনে
নেয়া যায় । কিন্তু যা আভাস পেলাম
এটা সিরিয়াল কিলিং ।
>তার
মানে আরো খুন হয়েছে
এধরনের এবং হবে ?
>হয়তো
বা হয়তো না । তবে
আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে । আর তাড়াতাড়ি-ই খুনিকে ধরতে হবে।
রিপোর্ট
নিয়ে এস.পি তাজের
কাছে গেলাম । রিপোর্ট জমা দিতেই সে
একবার দেখে বলল,
>বুঝলা
মামা,অবস্থা খুব সিরিয়াস, এ
নিয়ে এটা ১৯ নম্বর
খুন । একি প্রসেস, একি
সময়, একি জায়গায় লাশ
। পাহারা বসিয়েও লাভ হচ্ছে না
। কোন ফাকে যে সে এসে
লাশ ফেলে চলে যায়
খোদা ছাড়া কেউ জানে
না । এমনকি সিসিটিভি-ও হ্যাক করা হয় সেই সময় ।
>তার
মানে সে শিক্ষিত, আর
হে একটা কথা সে
ভালো করেই জানে কোন
অংশে আঘাত করলে সাময়িক
প্যারালাইজড হয়ে যায় মানুষ,
কেননা এই মেয়েটি খুনের
সময় অচৈতন্য অবস্থায় ছিল আর গলায়
খুব ছোট করে একটা
জায়গার নাম লেখা ।
বাকি গুলা জানি না ।
>কি
? তাহলেতো অন্যগুলোও
আবার চেক করতে হয়
। কোন জায়গার নাম লেখা ?
>মদনপুর
।
>দাড়া
তাহলে, আমি বাকি লাশগুলো
তোর কাছে পাঠানোর ব্যবস্থা
করছি আর মদনপুরে খোজ
নেয়ার চেষ্টা করে দেখি ।
>আচ্ছা,
কতক্ষন লাগবে বাকি লাশগুলো আনতে
?
>এই
ধর ৯ ঘন্টা সর্বমোট
।
>আচ্ছা
তাহলে আমি বাসায় যাই,
আর ডোম জাকির কে
বলি রিসিভ করে রাখতে ! কি
বলিস ?
>যেমনটা
ভালো মনে করিস !
#পার্টঃ
০২
এরপর
বাসায় চলে আসলাম,ঘুমানোর
চেষ্টা করলাম অনেক্ষন ধরে । কিন্তু কিছুতেই ঘুম আসল না
। বারবার এই কেইসটা আমাকে
ভাবাচ্ছে । সকাল ৭ টার দিকে
চোখ ক্লান্তিতে বুজে এলো । আমি
একটু ঘুমাতে পারলাম ।
ঘুম
থেকে উঠেই দেখি তাজের
মেসেজ,
> সবগুলো
লাশ মর্গে পাঠানো শেষ মনে হয়
একটা সম্ভাবনাময় তথ্য পেয়েছি । তুই জায়গার ব্যাপারটা শিউর হয়ে জানাস
।
আমিও
আর দেরি না করে
মর্গে চলে গেলাম । আজ অনেক
কাজ । মর্গে ঢুকতেই দেখি ইন্টার্ণ মেয়েটা
এসে তার সব কাজ
কম্পলিট করে রেখেছে সাথে
কোন লাশে কোন জায়গার
নাম লেখা আছে সেটাও
সে নোট করে রেখেছে
। আমি এসে আরো একবার
চেক করে তাজকে জায়গা
গুলো জানিয়ে দিলাম । সে বলল কিছুক্ষনের মধ্যে
জানাবে, আমি সবগুলো মেয়ের
গায়ে জায়গার নামগুলো লেখা অংশের ছবি
তুলে রাখলাম । তবে চিন্তার বিষয় সবগুলো লাশের
একেক জায়গায় নাম লেখা, কোনো
মিলই নেই । এবং কয়েকটা লাশে কি স্ট্রোক
এতটাই জোড়ে করা যে
নিচের চামড়ায়ও দাগ স্পষ্ট ভাবে
বসে গেছে । এরপর বাসায় গিয়ে
ভাবতে লাগলাম কেইসটা নিয়ে । অবশ্য না ভাবলেও চলত
। কারণ ঠিক তার দুদিন পরে
মদনপুরে একটি মেয়ের লাশ
ফেলে পালাতে গিয়ে পুলিশের হাতে
ধরা পরে একজন যুবক
। তার নাম হল ডা.সাদ
! এ খবর শুনে নিজেরই
অন্তরাত্মা কেপে উঠল । একজন
ডাক্তার হয়ে মানুষ কিভাবে
পারে ২০ জন মেয়েকে
এতটা ঠান্ডা মাথায় খুন করতে । আর
কী শুধুই খুন ? কতটা নৃশংস ভাবে
হত্যা । তবে ছেলেটাকে দেখতে
খুব মন চাইল । কেন
যেন মনে হল, সে
একা করতে পারে
না, এতটা সাহস তার
মধ্যে থাকবে না নতুবা তার
এই কাজের পিছনে খুব গভীর একটা
ঘৃনা, হিংসা আছে যার জন্য
সে এই কাজগুলো করতে
পেরেছে ।
তাকে পরের দিন নিয়ে যাওয়া হল জেলা ম্যাজিস্ট্রেট অফিসে । সেখানে তার পুলিশ প্রবিধান আইনে ১৬৪ ধারায় একজন ম্যাজিস্ট্রেট জবানবন্দি নিবেন । তবে সেখানে কোনো পুলিশ সদস্য এবং কেইস নিয়ে কর্মরত কোনো কর্মকর্তা থাকতে পারবে না । তাই আমার যাওয়া উচিত না এবং আইন বিরুদ্ধ হওয়া সত্বেও আমি সেখানে ঢুকার চেষ্টা করি । প্রথমে আমাকে ঢুকতে দেয়া না হলেও ওই ছেলেটির অনুরোধে নিয়ে যাওয়া হলো । তাকে এক রাতেই অনেকটা টর্চার করা হয়েছে ইনফরমেশন বাহির করার জন্য । ছেলেটার ডানগালে থাপ্পড় এর দাগ, হাতে লাঠির বাড়ির চিহ্ন । তবে অবাক করা বিষয় হলো ছেলেটির মধ্যে নির্লিপ্ততা আর নিষ্ঠা ছাড়া কিছুই দেখলাম না ।
সে তার জবান বন্দি শুরু করল- "" আমি ডা.সাদ । জন্ম ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নিজ জেলা/বাসস্থান সিলেট । বাবার বদলির চাকরির জন্য প্রায় জায়গা বদল করতে হত, তাই বন্ধু বলতে সেরকম কাওকে পাই নি । হঠাত হাই-স্কুলে পড়ার সময় মায়ের মনে হলো এরকম স্থান বদলে লেখা পড়ার ক্ষতি ছাড়া আর কিছুই হচ্ছে না । তাই শেষমেশ নিজ এলাকা সিলেটেই সেটেল হলাম । ভর্তি হলাম সেখানকার জিলা স্কুলে । ওই সময়ে পড়া চলাকালীন সময়ে একজন মেয়ের সাথে দেখা, তার সাথে সখ্যতা গড়ে ঊঠে সেটা নিজেও বুঝতে পারিনি । ওই মেয়ের পিছু পিছু কত যে কোচিং, প্রাইভেট ঘুরেছি তার ইয়ত্তা নেই। একসময় ক্যারিয়ার সিদ্ধান্তেও নিজের পছন্দকে প্রাধান্য না দিয়ে মেয়েটার পছন্দকে প্রাধান্য দিয়ে ভর্তি হলাম সিলেটের একটি প্রাইভেট মেডিকেল কলেজে । সেখানে প্রথমদিনই আমার সাথে কিছু বড় ক্লাসের মেয়েরা খুব বিচ্ছিরি র্যগিং করে । যার প্রতিপাদ্য ছিল, আমি একজন মেয়ের ওড়না ধরে টান দিতে হবে । কিছু করার নেই দেখে আমিও রাজি হয়ে যাই । ভাবলাম,আমার ফ্রেন্ড এর সাথে করলে পরে তাকে মানিয়ে নিব । কিন্তু না ওই মেয়েগুলা একজন মেয়েকে দেখিয়ে দিয়ে বলল ওই মেয়েটার সাথে করতে । আমি আর কোনো উপায় না দেখে রাজি হয়ে গেলাম ।ভেবেছিলাম সর্বোচ্চ থাপ্পড় দিবে বা কথা শুনাবে । ওড়না টান দিতেই মনে হল আরো কিছু জামার অংশ ভুল বসত ছিড়ে চলে এসেছে । লক্ষ করে দেখলাম তার জামা এক কোনা দিয়ে ছিড়ে গেছে এবং তার অন্তর্বাস দৃশ্যমান হয়ে গেছে । এত সে অনেক্টাই ক্ষিপ্র হয়ে যায় এবং আমাকে অনেক গুলো কথা শুনিয়ে চলে যায় । ভেবেছিলাম ব্যাপারটা এতটুকুতেই সীমাবদ্ধ থাকবে ।
#পর্বঃ
৩
>তুমি তাদেরকে কিভাবে মেরেছ ?
প্রথমে তাদেরকে দেখা করার কথা বলে কিডন্যাপ করেছি, এরপর তাদেরকে এনেস্থেসিয়া দিয়ে অচেতন করেছি । এরপর তাদের স্তন কেটেছি, তারপর তাদের বুকের মাঝে চিড়েও দিয়েছি । আর গলায় যেখানে ফেলে আসব তার নাম লিখেছি ।
>আর
কিছু বলার আছে তোমার
?
না স্যার, তবে স্যার অনেক
রহস্যের মধ্যেও রহস্য লুকিয়ে থাকে সেটা খুজে
বের করে নিতে হয়
।
>কি
বললে ? কিসের রহস্য ?
>না
স্যার কিছু না ।""
শেষের
কথা গুলো মনে অনেক
নতুন প্রশ্নের জন্ম দিলেও আমি
আর এ নিয়ে মাথা
ঘামাই নি । শুনেছি ছেলেটার কেসের ৩ টি ডেটেই রায়
বেড়িয়ে গেছে । জীবনে এই প্রথম কোনো
কেইসে দেখছি যে, আমাদের দেশের
বিচার ব্যবস্থা এতটা দ্রুত কাজ
করল এমনকি রায় কার্যকর করার
জন্য ১ মাস সময়
দিয়ে দিল । ছেলেটির রায় মৃত্যুদণ্ড ব্যতিত
আর কিছুই ছিল না । ছেলেটার
মৃতুদন্ড কার্যকর হয়েই যেত যদি
আরেকটা খুন না হত
এবং আমার মাথায় একটা
পয়েন্ট না আসত ।
ঠিক
রায় কার্যকর হওয়ার ৫ দিন আগে
রাতে আরেকটা ফোন কল তাজ করেছিল । সে বলেছিল,
>মামা,
সাদ তো জেলে, আরেকটা
খুন হলো কিভাবে ? তাও
ঠিক আগের প্যাটার্ণে ?
>কি
বলিস ? আবার ? আচ্ছা আমি আসছি । তুই লাশটা
কলেজের মর্গে পাঠা ।
>আচ্ছা,
ঠিকাছে । আমি এখনই পাঠাচ্ছি
। তবে আমার কেন যেন
মনে হচ্ছে সাদ ছেলেটা নির্দোষ
।
>এখনতো
আমারও তাই মনে হচ্ছে
। কি করা যায় বল তো
? আর মাত্র ৫ দিন পরেই
তার ফাসির আদেশ কার্যকর করতে
হবে । এই ৫ দিনে কি
সম্ভব তাকে নির্দোষ প্রমাণ
করা ।
>দেখ
প্রমান না হতে পারে,
আমরা চেষ্টা টা করি ?
>হুম,
আমিও দেখি ওর ব্যাকগ্রাউন্ড
টা ভালোমত নাড়াচাড়া দেই !
>হুম,
আমিও যাই । দেখ, কি করা
যায় ।
> আচ্ছা।
ময়নাতদন্ত
নুর মোহাম্মদ
0 মন্তব্যসমূহ