কলেজ যাত্রাঃ লোকাল বাসে একদিন

কলেজ যাত্রাঃ লোকাল বাসে একদিন

ক্যাম্পাসে যাওয়ার জন্যে বাসে উঠে বসলাম। আজ প্রচন্ড গরম তার উপর এই সময়টা স্কুল অফিসে যাওয়ার টাইম হওয়ায় বাসে প্রচুর ভিড়। আর এই ভিড় গরমে যখন চরম অবস্তা ঠিক তখনি কার ফোনে জানি বিকট আওয়াজে, ‘দাইয়া দাইয়া দাইয়ারে...., দাইয়া দাইয়া দাইয়ায়ারে....’ বলে রিংটোন বেজে উঠলো। খুব সম্ভবত আমার পাশের সিটে বসা লোকটার রিংটোন আর নাহয় আমার আশেপাশের সিটের কারো হবে। একেরপর এক ফোন বেজেই যাচ্ছে অথচ যার ফোন সে পিক ফোনটা পিক করার প্রয়োজনই মনে করছেনা। মুহুর্তেই শান্ত পরিবেশটা অসস্তিকর পরিবেশ পরিণত হয়ে গেছে।এভাবে ফোনটা প্রায় পাঁচ ছয়বার বাজলো। এরপরেও যখন কেউ ফোন পিক করছিলো না তখন খুবই বিরক্তি নিয়ে উচ্চবাক্যে বলে উঠলাম,
মিয়া কার ফোন বাজতেছে? ফোন পিক করেন না ক্যান? ফোনটা পিক করে রেহাই দেন প্লিজ!’
আমার কথাশুনে পুরোবাসের লোকজন চুপ হয়ে গেলো। আশেপাশের চিৎকার চেঁচামেচি বন্ধ। বাসে এতো ভিড়ের মধ্যেও খুব শান্তি বিরাজ করতেছে। রিংটোনটা বন্ধ হয়ে গেলো ইতিমধ্যে। যাক অবশেষে এই রিংটোনের আওয়াজ হইতে রক্ষা পাইলাম। 


এবার আমি বাসে ভাষণ দেওয়া শুরু করলাম, বাসের লোকজন খুব গুরত্ব দিয়ে আমার ভাষণ শুনছে। আমি বলতে লাগলাম, ‘মানুষের কমন সেন্স একেবারে নাই বলতেই নাইই। এরকম একটা পরস্থিতে কিভাবে এইসব রিংটোন হজম করা যায় আপনারাই বলেন? তাছাড়া রুচিরও একটা ব্যাপার স্যাপার আছে। এইসব দাইয়া ফাইয়া কোনো রুচিশীল ব্যাক্তির রিংটোন হতে পারে?’ আমি যখন এইসব বলছিলাম সবাই সায় দিচ্ছিলো আমার কথায়। মনে হচ্ছে আমার ভাষণে কাজ হয়েছে। যার মোবাইলের রিংটোন বাজতেছিলো সেটা আর শুনা যাচ্ছেনা। যাক বাবা আমার একটা ভাষণে তো বিকট এই রিংটোনটা বন্ধ হলো। হাফ ছেড়ে বাঁচা গেলো। শান্তি.................     Local Bus Bangladesh
আমার ভাষণের দশ মিনিট পর আবারো সেই রিংটোন বেজে উঠলো। এবার আর নিজেকে সামলাইতে পারলাম না। রাগে চিৎকার করে বলে উঠলাম, ‘কোন শালার ফোন বাজেরে, তোর কানে কি ঠাডা পড়ছেনি??’ ঠিক মুহূর্তেই আমার পাশে বসা পানখোর চাচায় ফিক করে হেসে দিয়ে আমার কান টা ভালো করে দেখে বললেন, ‘বাজান ফোনটা তো মনে হয় তোমার পকেটেই বাজতেছে। মাইনষেরে গালাগাল দিচ্ছো কেনো?’ধ্যাৎতেরিকি চাচা কি বললেন? আমার ফোন বাজতেছে? মানে কি? দ্রুত প্যান্টের পকেট থেকে ফোনটা বের করে হাতে নিয়ে চেক করে দেখি সত্যিই তো আমার ফোনটাই বাজতেছিলো। মুহূর্তেই ভাবনায় পড়ে গেলাম। কিছুতেই হিসেব মিলাতে পারছিনা। আর আমার আমার রিংটোনই বা চেঞ্জ করলো কে? কোন শালায় এই আকামডা করেছে সেটা ভাবতে ভাবতে ফোনটা সাইলেন্ট মোড করে, নিজেও সাইলেন্ট হয়ে ভদ্রভাবে বসে পড়লাম। আর কোনো কথাই বের হচ্ছিলো না আমার মুখ দিয়ে। অবশ্য কিছু বলার মতো মুখ আমার আর রইলো কই? তাই বাধ্য হয়ে আমার সিটে আমি বসে পড়লাম। সিটে বসেই আমি ভাবটা এমনভাবে নিলাম যেনো কিছুই হয়নি। কিন্তু বাসের লোকজন যেভাবে কৌতূহলি হয়ে আমার দিকে তাকাচ্ছিলো, নিজেকে তখন চিড়িয়াখানার বানর মনে হচ্ছিলো। দুইটা বাদামের জন্যে একটু আগে একটা সার্কাস দেখিয়েছি। ব্যাস এই আরকি!
লোকাল বাসে একদিন ‖ © istiakislam2018@gmail.com


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

বেশি বার পড়া হয়েছে

একজন রিক্সা-ওয়ালা