গল্পঃ "জ্বীন প্রতিবেশী" --- পর্বঃ ০৭

গল্পঃ "জ্বীন প্রতিবেশী"

পর্বঃ ০৭ 


আফসানা তার ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে দেখলো, তার ভাই কি যেনো ভাবছে! সে এতোক্ষণ যা বুঝিয়েছে ভাইকে সেগুলি নিশ্চয়ই তার কানে যায়নি।
--"
ভাইজান, আপনি কি ভাবছেন? আমাদের কথা কি কানে যাচ্ছে আপনার?" আফসানার বিরক্তি এখন চরমে। আসলে সে খুব ভয় পেয়ে গেছে। সে কোনো ভাবেই চায় না এবার আহমাদের ভুলের কারণে তাদের দাদাজান আর আব্বুজান কোন ঝামেলায় পরুক।
--"
ঠিক আছে বোন, আমি আর "ওর" সাথে আর দেখা দিবো না। ওর সামনে অদৃশ্য হয়েই থাকবো। আর যখন ঘুমাবে তখন ওর স্বপ্নে দেখা দিবো। এবার আপনারা নিশ্চিত হতে পারেন।
আহমাদ মন খারাপ করে বোন অার চাচাকে বলে।
আহমাদের কথা শুনে আফসানা স্বস্তুি পেলেও তাদের চাচা রাশিদ বেগ সূক্ষ্ণ ভাবে একটা রহস্যের হাসি হাসেন। কিন্তু এই হাসি আহমাদ আর তার বোনের নজরে পরেনা!!
আফসানা ড্রইং রুমে অনিলার সাথে দেখা করতে আসে। আহমাদ তার সাথে সাথেই আসে। কিন্তু তাকে দেখা যাচ্ছেনা। সে অদৃশ্য হয়ে অনিলার একদম কাছাকাছি যেয়ে বসে। আফসানার হাসি পেয়ে যায় ভাইয়ের কান্ড দেখে।
--"
কেমন আছেন? কদিন আসেননি যে?আমিতো আপনার অপেক্ষায় ছিলাম।"
আফসানা হাস্যজ্জল মুখে অনিলার দিকে তাকিয়ে বলে। অনিলা কে আকাশি সালোয়ার কামিজে খুব মানিয়েছে। আফসানার মনে হয় তাদের সমাজের যে কোনো জ্বীন কন্যার চেয়ে অনিলা দেখতে বেশি সুন্দরী। 
--"
আসলে বাসায় একটু কাজ ছিলো কদিন।তাই আসা হয়নি।"
অনিলা নিজের কথা শুনে নিজেই হতাশ হয়।সে তো এসেইছিলো, কিন্তু অাফসানাদের দরজা অাটকানো দেখে ছাদে গিয়েছিলো। কিন্তু কোন কারনে এটা সে আফসানাকে বলল না!
অনিলা বার বার ভেতরের রুমের দিকে আড় চোখে তাকাচ্ছে। আহমাদ বের হচ্ছেনা কেনো!
তাকে একটু মন ভরে দেখতেইতো মায়ের চোখ ফাকি দিয়ে এখানে আসা!
আহমাদ আর আফসানা অনিলার মনের অবস্থা বুঝতে পেরে মিটি মিটি হাসে।
--"
আপনি কি বাসায় একা? অনিলা আর ধৈর্য্য ধরে রাখতে পারেনা। যদিও সে জানে আহমাদ বাসাতেই আছে!
--"
না, আমার ভাই বাসায় আছে। ওইতো আপনাকে দরজা খুলে দিলো "
--"
হ্যা। আসলে আমি খেয়াল করিনি কে ছিলো ওটা।"
অনিলা ঠোঁট উল্টিয়ে এমন ভাব করলো যেন সে আহমাদ কে পাত্তাই দিলো না।
অনিলার বাহিরে এমন ভাব দেখে আহমাদ খুব মজা পেলো। সে অনিলার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে তাকলো। অনিলা আফসানার সাথে কথা বলছে আর নিজের তেল চপ চপ করা চুলের বেনিকে নাড়াচ্ছে হাত দিয়ে।


আহমাদ অনিলার তেলে চপ চপ করা চুলের প্রেমে পরে গেলো
অনিলা আর বেশিক্ষণ বসে থাকতে পারলো না আফসানা দের বাসায়।আহমাদের কোন খবর নেই। দরজা খুলে দিয়ে সেই যে ভেতরে গেলো আর আসলোনা। অনিলা কষ্ট পেলো মনে।
তার মনে হলো সে অযথাই আহমাদ কে নিয়ে ভাবছে! সে আফসানার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বাসায় চলে আসে।

তার জন্য অনিলার মনের অবস্থা দেখে আহমাদের খুব খারাপ লাগে। সে অনিলাকে কোনো ভাবেই কষ্ট দিতে চায়না। কিন্তু এখন কি করবে সে। অনিলার সাথে যদি বাকিটা জীবন কাটাতে চায় তাহলে একয়টা দিন তাকে অদৃশ্য হয়েই থাকতে হবে অনিলার পাশে পাশে।
কিন্তু সে অবশ্যই প্রতিদিন অনিলার সপ্নে আসবে! নিজের কাছে নিজে ওয়াদা করে আহমাদ।
অনিলা বাসায় এসে দেখে লাবনি ইসলাম এখনও রুম থেকে বের হয়নি। হাফ ছেড়ে বাঁচে সে। মা যদি দেখতো সে বাসায় নেই কি কান্ডটাই না করতেন।
অনিলা তার মায়ের রুমে দরজা নক করে।
--"
ভেতরে আয় মা।
লাবনি ইসলাম মেয়েকে ভেতরে আসতে বলেন। তিনি মেয়েকে অনেকবার বলেছেন, তার রুমে নক করে আসার প্রয়োজন নেই। মা, মেয়ে দুজনইতো শুধু থাকেন বাসায়। কিন্তু অনিলা কখনোই অনুমতি ছাড়া রুমে ঢুকবেনা। বড়ই লক্ষী মেয়েটা।
অনিলা রুমে ঢুকে দেখে মা রকিং চেয়ারে দুলছেন। হাতে ফোন।
--"
বাবার সাথে কথা হয়েছে মা? কেমন আছে বাবা? অনিলা তার মা কে জিজ্ঞেস করে।
--"
তোর বাবা ভালো আছে। তোর কথা জিজ্ঞেস করছিলো বার বার। তোর সাথে কয়দিন থেকে কথা হচ্ছেনা দেখে মন খারাপ। তুই ফোন দিয়ে কথা বলিস তোর বাবার সাথে।
লাবনি ইসলাম অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে কথা গুলি বল্লেন মেয়েকে। কারন অনিলার মুখের দিকে তাকিয়ে তিনি কখনো মিথ্যা বলতে পারেন না।

অনিলা মা কে হাসি দিয়ে বলে 
--"
তাই মা! বাবা আমার কথা জিজ্ঞেস করেছে? ঠিক আছে মা, আমি বাবার সাথে কথা বলবো।"
বলেই সে মায়ের রুমের দরজা চাপিয়ে দিয়ে নিজের ঘরে যায়।

অনিলা খুব ভালো করেই জানে তার বাবা তার কথা কিছুই জিজ্ঞাসা করেনি। এসব কিছুই মা বানিয়ে বলেছেন। তবে এসব যে মা আজকে থেকে বলছেন তা নয়।
অনেক আগে থেকেই লাবনি ইসলাম অনিলা আর আশরাফ হোসেনের মধ্যে বাবা মেয়ের স্নেহের সম্পর্কটা কে সুন্দর করার চেষ্টা করে অাসছেন। অনিলা যখন ছোট ছিলো তখন ব্যাপার গুলি সহজ ছিলো তার জন্য। কিন্তু অনিলা যতই বড় হচ্ছে ততোই তার জন্য সব কিছু কঠিন হয়ে যাচ্ছে। 

অনিলা কাঁদছে। খুব করে কাঁদছে। তার আজ কিছুই ভাল্লাগছেনা। সে জানতে চায় তার বাবা তাকে কেনো কখনো তার নিজের সন্তানের মতো করে ভালোবাসেনি। সে অার মায়ের সামনে মিথ্যা অভিনয় করতে চায়না। সে তার মাকে বুঝাতে চায় যে সে ভালোভাবেই বুঝে তার বাবা তার কোনো খবর নেয়না। অনিলা ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদে।

আহমাদ অনিলার একদম মুখোমুখি বসে আছে।
অনিলাকে কাঁদতে দেখে তার খুব কষ্ট হচ্ছে।কিভাবে অনিলার মনটা ভালো করা যায় আহমেদ ভাবতে থাকে। সে অনিলার চোখের পানি আংগুল দিয়ে ছুয়ে দেয়।
সাথে সাথে অনিলার দু চোখ জুড়ে ঘুম নেমে আসে। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই ঘুমের রাজ্যে হারিয়ে যায় সে।
অনিলা দেখে তার বিছানায় একজন পুরুষ বসে আছে। তার মুখ অন্য দিকে ঘোরানে। 
অনিলা ভাবছে তার ঘরে কে ঢুকলো? অনিলার ঘর খুব সুন্দর একটা সুবাশে ভরে গেছে।
পুরুষ টিকে দেখে অনিলার ভয় পাওয়ার কথা।কিন্তু অনিলার একদম ভয় লাগছেনা।
--"
কে আপনি?আমার ঘরে কিভাবে ঢুকলেন?"
অনিলা তাকে জিগ্যেস করে।কিন্তু সে কোনো কথা বলেনা।
--”
কি ব্যাপার কোনো উত্তর দিচ্ছেন না কেনো?অনিলা আবারো পুরুষ টিকে প্রশ্ন করে।
এবার পুরুষ টি ধীরে ধীরে মুখ ঘুরিয়ে অনিলার দিকে তাকায়। তাকে দেখে অনিলা ভীষন চমকে যায়! সে সেই, যাকে দেখার জন্য, যার সাথে একটু কথা বলার জন্য অনিলা সকাল থেকে অপেক্ষা করছিলো। পুরুষটিকে দেখে অনিলার ঠোট দিয়ে অস্ফুটে সুরে এক নাম বের হয়, আর সেটা হলো "আহমাদ"
--"
আপনি? আপনি এখানে কিভাবে এলেন? মা দেখেনি আপনাকে?"
অনিলা আহমাদ কে জিজ্ঞেস করে। আহমাদ হাসে অনিলার কথা শুনে। মুখে কিছুই বলেনা সে।
অনিলা রাগ দেখায়,
--"
হাসছেন কেনো। আমি কি কৌতুক বলছি আপনাকে?" অনিলা চোখ গরম করে বলে।
--"
কৌতুক কি?" আহমেদ অনিলাকে জিজ্ঞেস করে। 
--"
ওমা! কৌতুক কি অাপনি জানেন না। কোন দেশ থেকে এসেছেন শুনি?" 
অনিলা কপট রাগ দেখায়।
আহমাদ আরো হাসতে থাকে অনিলার রাগ দেখে।
অনিলার খুব ভালো লাগছে আহমাদকে দেখে।তার মনে হচ্ছে সে তার অতি আপন জনকে বহু দিন পর তার সামনে দেখছে।
কিন্তু অনিলা কিছুতেই চাচ্ছেনা যে আহমাদ বুঝে ফেলুক সে কতটা খুশি আহমাদকে দেখে।
অনিলা তাকিয়ে দেখে আহমাদের হাতে সেই বাঁশিটা। অনিলা বাশিঁটা দেখিয়ে আহমাদ কে বাজাতে বলে।আহমাদ মাথা নাড়ায়।সে বাজাবেনা।
অনিলা গাল ফুলিয়ে অভিমান করে। আর তখন আহমাদ মুচকি হাসি দিয়ে বাঁশিটি তুলে বাজানোর জন্য। 
কি অদ্ভুত সুন্দর এই বাঁশির সুর। অনিলা বিমোহিত হয়ে যায় বাঁশির সুরে। তার দু চোখ বন্ধ হয়ে অাসতে চায়। অনিলা দেখে বাঁশি বাজাতে বাজাতে আহমাদ অনেক দূরে চলে যাচ্ছে।অনিলার চায়না আহমাদ এখন তাকে রেখে চলে যাক। অনিলা হাত তুলে আহমাদকে না যেতে ইশারা করতে চায়। কিন্তু সে পারেনা। গভীর ঘুম এসে ভাসিয়ে নিয়ে যায় অনিলা কে।



চলবে..........

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

বেশি বার পড়া হয়েছে

একজন রিক্সা-ওয়ালা