গল্পঃ "জ্বীন প্রতিবেশী" --- পর্বঃ ১৩ { সমাপ্ত পর্ব }

গল্পঃ "জ্বীন প্রতিবেশী"

পর্বঃ ১৩ { সমাপ্ত পর্ব }



অনিলা ডায়েরির একেক টা পেজ উল্টায় আর হাত দিয়ে নিজের চোখের পানি মুছতে থাকে। সে যে একজন জ্বীনের বংশধর এই ব্যাপার টা না যত বেশি অবাক করেছে তাকে, তার চেয়ে বেশি কষ্ট পাচ্ছে সে এটা জেনে যে তার এই মা, বাবা তাকে জন্ম দেননি।

অনিলার হাত কাঁপছে। সে আর পড়তে পারছেনা। অনিলা ডায়েরি টা হাতে নিয়ে তার মায়ের রুমে যায়। লাবনি ইসলাম মেয়েকে ডায়েরিটা পড়তে দিয়ে নিজের রুমে চলে গিয়েছিলেন। অনিলা মায়ের কাছে যেয়ে দেখে তিনি তার রকিং চেয়ারে বসে সিলিং এর দিকে তাকিয়ে আছেন। তার গাল বেয়ে টপ টপ করে পানি গড়িয়ে পড়ছে। অনিলা মায়ের সামনে হাঁটু গেরে বসে মায়ের কোলে মাথা রাখে। লাবনি ইসলাম মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দেন। দু জনের মুখেই কোনো কথা নেই। চারপাশে শুধুই নীরবতা!

অনেক্ষন পর অনিলা মাথা তুলে মায়ের দিকে তাকায়। এখনও মায়ের চোখ বেয়ে পানি পড়ছে। অনিলা মায়ের চোখের পানি মুছে দিয়ে বলে,
--"
মা,আমি তোমাকে ছেড়ে কোথাও যাবনা। আমি তোমার সাথেই থাকবো। অনিলা মায়া ভরা দৃষ্টিতে মায়ের দিকে তাকিয়ে থাকে।
--"
বোকা মেয়েটা অামার, তোকে যদি অামার সাথে এখন রাখা যেতো, তাহলে কি আমি কোথাও যেতে দিতাম তোকে , বল মা? কিন্তু তোকে যে যেতে হবে, তোর জাতির কাছে। 
যেই সমাজে তোর জন্ম। এটাই তোর জন্য সবচেেয়ে উত্তম হবে মা।
লাবনি ইসলাম কান্নামাখা কন্ঠে বললেন।
--"
কিন্তু মা, আমি কোথায় যাবো? আমিতো কিছুই জানিনা এসবের? আমি কোথা থেকে এসেছি, আমার বাবা মা কে? কোথায় আমার ঠিকানা?” 
অনিলার কথা শুনে লাবনি ইসলামের মনে পড়ে যায় তার বাবা মারা যাওয়ার সময়ের কথা। লাবনি ইসলামের বাবা যখন খুবই অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। তখন তিনি তার বাবাকে অনিলার বাবা মায়ের কথা জিজ্ঞেস করেছিলেন। তিনি শুধু এত টুকুই বলেছেন, অনিলার যখন যাওয়ার সময় হবে মানুষের সমাজ থেকে, তখন যেনো লাবনি ইসলাম তাকে যেতে দেয়। অনিলা সব ব্যাপার আগে থেকেই নাকি ব্যবস্থা করা আছে।
লাবনি ইসলামের বাবা এতো টুকু বলেই আর কিছু বলতে পারেন নি। তিনি তার পর পরই ইন্তেকাল করেন।

অনিলা মায়ের সাথে কথা সময় খেয়াল করলো তার শরীর আবার খারাপ হয়ে আসছে। লাবনি ইসলাম ব্যাপারটা খেয়াল করলেন। তিনি মেয়েকে ধরে আস্তে আস্তে তার রুমের দিকে নিয়ে গেলেন। অনিলা রুমে এসে বিছানায় শুয়ে পরলো।
#
অাহমাদ বাসায় পৌছে গেছে। ভাই কে এতোদিন পর দেখে আফসানা আহ্লাদে আটখানা হয়ে পড়েছে। আহমাদ বোনের মাথায় স্নেহের পরশ বুলিয়ে দিয়ে বলল, --"বোন, তুই জ্বীন সেবক দের আমাকে খুজতে পাঠিয়ে খুব ভালো করেছিস। আর ভালো হয়েছে প্রাসাদে কিছু জানাস নি। আমিতো ভেবেছিলাম আর কোনোদিন হয়তো কারো সাথে দেখা হবেনা।"
--"
ভাইজান, আমিও খুব ঘাবড়ে গিয়েছিলাম আপনি ফিরে আসছেন না দেখে।ভাগ্যিস, অাব্বু জান খাবরি আসাদ কে পঠিয়েছিলেন।না হলেতো আমি বুঝতেই পারছিলাম না যে কি করবো!" 
অাফসানা বাতাসে ভাসতে ভাসতে আহমাদ কে বলে। কিন্তুু ভাইজান, রাশিদ বেগ কি আপনাকে কিছু বলেছে? কেনো কয়েদ করেছিলো অাপনকে?
--"
কেনো আবার? সেই আগের কাহিনী তার।আমি না থাকলে আমাদের পরিবার থেকে পরবর্তী সমাজ প্রধাণ তো ওই হবে। কিন্তু এবার সে সব সীমা ছাড়িয়ে গেছে। আমাকে জানে মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছিলো। বলেছিলো, নতুন চাঁদ উঠার সাথে সাথে আমাকে আগুনে জ্বালিয়ে মারবে!" 
ভাইয়ের কথা শুনে আফসানার কলিজা কেঁপে উঠে। 
--"
ভাইজান, আপনি এখন আর চিন্তা করবেন না। খাবরি আসাদ দুজন জ্বীন সেবকদের হুকুম দিয়েছে ওই বদমাশ কে পাকড়াও করে প্রাসাদে নিয়ে যেতে। 
কিন্তু ভাইজান, একটা সমস্যা হয়ে গেছে।দাদা জান যে দুটো চুরি দেয়েছিলেন বিলকিস কে দেয়ার জন্য, সেখান থেকে একটা গায়েব!

আফসানার কথা শুনে আহমাদ অবাক হয়ে গেলো। ওই চুরি জোড়া লাগবেই। না হলে বিলকিস প্রাসাদে প্রবেশ করতে পারবেনা। খুব ঝামেলা হয়ে যাবে।
--"
কি বলিস?কোথায় যাবে খুজে দেখিসনি?"
--"
খোজা লাগবেনা ভাইজান।কারন চুড়িটা চুরি করে নিয়ে গেছে রাশিদ বেগ।"
এবার আহমাদের ভীষন রাগ উঠে যায়। তার চোখ সবুজ হয়ে জ্বলতে থাকে। এসে ভাবতে থাকে, এবার আর ছাড় দিবেনা রাশিদ বেগ কে। না কোনো ক্ষমা, না তো যাবজ্জীবন দন্ড। এবার রাশিদ বেগ কে মরতেই হবে!

লাবনি ইসলাম বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছেন।আকাশ আজ একদম পরিস্কার। মেঘের ছিটে ফোটাও নেই। কে বলবে দুদিন আগেও ঝড় হয়েছিলো। তিনি দেখছেন কখন চাঁদ উঠবে।চাঁদ উঠলেই অনিলা কে নতুন পোষাক পড়িয়ে দিবেন। আগের গুলিতো এখন আর পড়তে পারবেনা। তিনি মনে মনে ভাবলেন, আচ্ছা, জ্বীনরা কি জামা কাপড় পরে? নিজের প্রশ্নে নিজেই হাসেন লাবনি ইসলাম।

#
আহমাদ আর আফসানা ছাদেে ট্যাংকির উপর বসে আছে। আর কিছুক্ষণ পর চাঁদ উঠবে।আহমাদ এর মাঝে একবার অনিলা কে দেখে এসেছিলো। কিন্তু অনিলার যন্ত্রনা মাখা মুখ দেখে আহমাদ খুব কষ্ট পাচ্ছিলো। তাই আফসানা ভাইকে ছাদে নিয়ে আসে।

--"
ভাই, তোমার এতো দিনের প্রতীক্ষা তাহলে শেষ হতে যাচ্ছে!"
আফসানা দুষ্ট হাসি দিয়ে ভাইয়ের দিকে তাকায়।
--"
এখনো অনেক কাজ বাকি আছেরে! বিলকিস আমাদের সাথে কিভাবে মানিয়ে নিবে,দাদাজান কে কিভাবে জানাবো আমার পছন্দের কথা?"
আহমাদের মুখে চিন্তার ছাপ।
--"
হ্যা ভাইজান। আপনি যখন এখানে ছিলেন না তখন আমিও ভেবেছিলাম এই ব্যাপারে।
--"
বিলকিস কে প্রাসাদে নেয়ার পর আরো এক টি গুরুত্বপূর্ণ কাজ অাছে।"
অাহমাদ মুচকি হেসে বোনের দিকে তাকায়।
অাফসানাও হাসি দিয়ে মাথা নাড়ে। এই মাথা নাড়ানোর অর্থ হচ্ছে সে জানে গুরুত্বপূর্ণ কাজ টা কি!
#
লাবনি ইসলাম মেয়েকে খুব সুন্দর একটি সাদা পোষাক পড়িয়ে দিলেন। তাকে দেখতে রাণীর মত লাগছে।
অনিলার কোনো হুশ নেই। তাকে দেখে মনে হচ্ছে খুব গভীরঘুমে তলিয়ে অাছে। কিন্তু কিছুক্ষন পর পর যন্ত্রণায় কাতরে উঠছে সে।

লাবনি ইসলাম এখনো কান্না করেই যাচ্ছেন। তিনি অনিলার রুম থেকে বেড়িয়ে আসলেন।হঠাৎ তার মনে হলো তার পুরো বাসা খুব মিষ্টি একটা সুবাসে ভরে গেছে। লাবনি ইসলাম চোখ মুছে একটা হাসি দিলেন। তিনি বুঝতে পারছেন অনিলার যাওয়ার সময় একদম ঘনিয়ে এসেছে। তিনি হাসি মুখে মেয়েকে বিদায় জানাতে চান।
আহমাদ আর আফসানা অনিলার দু পাশে বসে আছে। অনিলাকে সাদা পোষাকে খুব সুন্দর দেখাচ্ছে। আহমাদের ইচ্ছা করছে নিঃশ্বাস বন্ধ করে অনিলার দিকে এর দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে। কিন্তু ছোট বোন পাশে থাকাতে লজ্জায় সে তাকাতে পারছেনা


#
অনিলার যন্ত্রণা বেড়েই চলছে। খুব ছটফট করছে সে। একটু পর পর চোখ মেলছে যন্ত্রণাতে তার দুই চোখ থেকে সবুজ রঙ এর আগুনের হলকা বের হচ্ছে!
আহমাদ আর আফসানা অনিলার দুই হাত শক্ত করে ধরে আছে। চাঁদ ডুবে যাওয়ার সাথে সাথেই অনিলার সব কষ্ট, যন্ত্রণা দূর হয়ে যাবে। 
আহমাদের খুব খারাপ লাগছে অনিলার এই অবস্থা দেখে। কিন্তু পরক্ষণেই এই ভেবে ভালো লাগছে তার যে, আর কিছুক্ষণ পরই অনিলা তাদেরই একজন হয়ে যাবে।

আহমাদ এক হাতের তার বাঁশিটা বের করে বাজাতে থাকে। কারণ সে জানে এই বাঁশির সুর অনিলার খুবই পছন্দের। 

অনিলা দেখতে পাচ্ছে দুজন মানুষ অনেক দূর থেকে হেটে আসছে তার দিকে। কিন্তু তাদের চেহারা দেখা যাচ্ছেনা। তাদের একজনের হাতে সুন্দর একটা বাঁশি। সে খুব মোহনীয় সুরে বাঁশি বাজাচ্ছে। তারা দুজন অনিলার আরো কাছাকাছি চলে আসে। হাত বাড়িয়ে দিয়ে ডাকছে তারা অনিলা কে। অনিলা তাদের মুখ দেখার চেষ্টা করছে। তারা অনিলার হাত ধরে ফেলে।আর সাথে সাথেই তাদের চেহারা স্পষ্ট হয় অনিলার কাছে।এতো আহমাদ আর আফসানা!!

অনিলার চোখ খুলে যায়। তার মাথা খুব হালকা হালকা লাগছে। পুরো ঘর অন্ধকার।
অনিলার মনে হচ্ছে তার দুপাশে দুজন বসে আছে। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো তার একদম ভয় লাগছেনা!! ধীরে ধীরে অনিলার সামনে সব স্পষ্ট হয়ে আসে। যদিও কোনো অালো নেই। অনিলা তাকিয়ে দেখে তার বাম পাশে আহমাদ বসা। সে তার হাত ধরে আছে। অনিলা লজ্জা পেয়ে যায়। সে তাড়াতাড়ি তার হাত ছাড়িয়ে নেয় আহমাদের হাত থেকে। ডান দিকে তাকিয়ে দেখে আফসানা বসা। তারা দুজনই তার দিকে তাকিয়ে হাসছে।
অনিলার আর বুঝতে কষ্ট হলোনা তারা কে
এবং তারা দুই জন এখানে কেনো এসেছে। সে উঠে বসে। এখন শরীর একদম ঝরঝরে। কোন যন্ত্রণা নেই।

--"
সু-স্বাগতম অাপনাকে অামাদের জ্বীন সমাজে।
অাফসানা হাসি দিয়ে অনিলাকে বলে।
--"
ধন্যবাদ।"
অনিলা ছোট করে জবাব দেয়।
আহমাদ এখনো তার দিকে তাকিয়ে আছে।অনিলার খুব লজ্জা লাগছে। সে মনে মনে চাচ্ছে আহমাদ যেন এখান থেকে চলে যায়।
ভাগ্যিস, জ্বীন দের মনের কথা অন্য জ্বীনরা বুঝতে পারেনা!
--"
আপনাকে এখন আমাদের সাথে যেতে হবে।"
অবশেষে আহমাদ মুখ খুলল। 
--"
কোথায় যেতে হবে অামাকে?"
অনিলা জিজ্ঞেস করে।
--"
অনেক দূরে। যেখানে এই মিষ্টি গুলি পাওয়া যায়।"
অাফসানা হাসি দিয়ে আহমাদের নিয়ে আসা মিষ্টি গুলি অনিলার সামনে এনে রাখে।
অনিলার মিষ্টি গুলো দেখে অবাক হয়ে যায়।তার তো এই মিষ্টি গুলি খেতে খুবই ইচ্ছা করছিলো। সে অাল্লাহর কাছে শুকরিয়া জানিয়ে একটা মিষ্টু মুখে দেয়।
--"
ভাইজান আপনার জন্য মিষ্টি গুলি এনেছেন। তাকে একটা ধন্যবাদতো দিন।"
আফসানার দুষ্টমি দেখে লজ্জায় অনিলার দুই গাল লাল হয়ে যায়। আহমাদ মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকে।
--"
আমি যাওয়ার আগে আমার মায়ের সাথে দেখা করতে চাই।"
অনিলা আফসানার দিকে তাকিয়ে বলে।
--"
ঠিক আছে।আপনি তার সাথে দেখা করে আসুন। আমরা অপেক্ষা করছি।
আফসানা অনিলাকে মায়ের সাথে দেখা করে আসতে বলে।
অনিলা বিছানা থেকে তার রুম নেমে লাবনি ইসলামের ঘরের দিকে যায়। তার নিজের শরীরটা খুব হালকা লাগছে। অনিলার মনে হচ্ছে সে বাতাসে ভেসে ভেসে হাটছে!!
লাবনি ইসলাম এখনো বাড়ান্দায় বসে আছেন। অনিলা মায়ের পাশে গিয়ে দাঁড়ায়।
--"
মা,আমার যাওয়ার সময় হয়ে গেছে। ওরা আমাকে নিতে এসেছে।"
অনিলা অঝোরে কান্না করছে। কিন্তু লাবনি ইসলাম নিজেকে শক্ত রাখার চেষ্টা করছেন। মেয়েকে বিদায় দিতে হবে।
--"
যেখানেই থাকিস ভালো থাকিস মা।"
লাবনি ইসলাম জোর করে গলায় কান্না অাটকে রাখার চেষ্টা করন।
--"
মা,তুমি একা থাকবে কি করে? তোমার কষ্ট হবেনা?" 
অনিলার কথা শুনে লাবনি ইসলাম হেসে বলেন
--"
কালকে তোর বাবা আসছেন দেশে।এখন থেকে আমরা একসাথেই থাকবো।"
লাবনি ইসলামের কথা শুনে অনিলা শান্তি পায়। সে বুঝতে পেরেছে আশরাফ হোসেন এতোদিন কেনো দেশের বাইরে ছিলেন। 
--"
বাবার সাথে দেখা করা হলনা আর।" অনিলা আক্ষেপের সুরে বলে। লাবনি ইসলাম মেয়েকে জড়িয়ে ধরেন। তার মনে হলো যেনো তিনি খুব নরম কিছুকে ধরেছেন, যার দেহে কোনো হাড় নেই!
-- "
আমি আসি মা। নিজের খেয়াল রেখো। কখনো সুযোগ পেলে তোমাদের এসে দেখে যাবো।" অনিলে বের হতে নেয়। 
-- "
একটু দাড়া মা।
লাবনি ইসলাম পেছন থেকে ডাকেন। তিনি অনিলার সামনে যেয়ে তার বাহুতে বাধা তাবিজের সুতলি টা খুলে দেন। অনিলা একটা হাসি দিয়ে চোখের পানি মুছে বেরিয়ে যায়।

আহমাদ, অনিলা আর আফসানা বাতাসে ভাসছে। অনিলা হঠাৎ হঠাৎ পড়ে যেতে নেয়। এসবে অভ্যস্ত হতে আরো সময় লাগবে তার।

আফসানা বক বক করেই চলছে। এখন থেকে অনিলা কে কি করতে হবে, কিভাবে চলতে হবে, কি কি খেতে হবে ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু 
আহমাদ বেশ চুপচাপ। সে শুধু কিছুক্ষণ পর পর অনিলার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিচ্ছে। 

-- "
ভাইজান,আমরা কিন্তু উনাকে আর অনিলা নামে ডাকতে পারবো না। দাদাজানের দেওয়া নামেই ডাকতে হবে।
আফসানা হাসতে হাসতে আহমাদ কে বলে। আহমাদ বোনের কথায় সায় দেয়।
--"
নানাজান কি নাম রেখেছিলেন অামার?"
--"
বিলকিস।"
অাহমাদ খুব খুব নিচু স্বরে বলে।
--"
আপনি কি জানেন, বিলকিস কার নাম ছিলো?"
আফসানা অনিলাকে জিজ্ঞেস করে। অনিলা মাথা নাড়ে, সে জানেনা।

অনিলার পেছন থেকে আহমাদ ইশারা করে আফসানাকে। যেনো সে এখন চুপ থাকে। অনিলাও আর কিছু বলেনা। সে কিছু কিছুক্ষণ পর পর আড় চোখে অাহমাদ কে দেখে। অার দু'জনের চোখা চোখি হলেই অনিলা খুব লজ্জায় পরে যায়!

আহমাদরা প্রাসাদের কাছাকাছি চলে এসেছে।কিন্তু এখন ওরা প্রবেশ করতে পারবেনা সেখানে। কারণ অনিলা মানে বিলকিসের চুড়িটা নেই সাথে। খাবরি আসাদ এর এখানে থাকার কথা।

আফসানা কিছুক্ষণ পর দেখলো অনেক দূর থেকে বাতাসের সাথে মিশে কয়েকজন জ্বীন সেবক অাসছে। তাদের সাথে আসাদ কেও দেখা যাচ্ছে। 
--"
ভাইজান দেখেন। খাবরি আসাদ আসছে।তার সাথে আরো 'জন আছে।"
আহমাদ তাকিয়ে দেখে যে দুজন জ্বীন সেবক তাকে মুক্ত করেছিলো তারা রাশিদবেগ কে ধরে নিয়ে আসছে। তার ঠোঁট অাগুন দিয়ে সেলাই করা। রাগে ফোঁস ফোঁস করছে সে।
অনিলা তাদের দিকে তাকিয়ে আছে। তাদের একজন কে তার অনেক পরিচিত লাগছে।
--"
আরেহ কেয়ারটেকার চাচা! আপনি এখানে।
অনিলার মুখ হা হয়ে আছে। তার বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে এই লোকটাও যে জ্বীন। রাশিদ বেগ অনিলার দিকে জ্বল জ্বল সবুজ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।
আর তখনই অনিলার মনে পড়ে যায়, সে একদিন এই জ্বীনলোক টার চোখ দেখে এতো ঘাবড়ে গিয়েছিলো। 
--"
কোনো কেয়ারটেকার নয়। রাশিদবেগ। যাকে আমরা আপন চাচাজানের মত সম্মান করতাম। আর সে আমাদের কত ক্ষতি করতে চেয়েছিলো। ভাইজান কে প্রাণে মেরে ফেলতে চেয়েছিল এই বদজ্বীন।" অাফসানার কণ্ঠে ক্ষোভ ঝরে পড়ে।
--"
থাক বোন। এখানে আর সময় নষ্ট না করি। অাব্বুজান একে কঠিন শাস্তি দিবেন।"
--"
ঠিক বলেছেন ভাই।"
আফসানা খাবরি আসাদের দিকে তাকায়। সে হাতে সেই চুড়িটা ধরে আছে। আফসানা আর কথা না বাড়িয়ে চুড়িটা নিয়ে অনিলার হাতে পড়িয়ে দেয়। অনিলা চুড়ি দুটির দিকে তাকিয়ে থাকে। এতো সুন্দর গয়না সে অাগে কখনো দেখেনি!
#
অনিলার সামনে বিশাল বড় একটা প্রাসাদ। খুবই সুন্দর দেখতে। প্রতিটা দেয়াল থেকে আলো বিচ্ছুরিত হচ্ছে। প্রাসাদের সামনে খুব সুন্দর একটা ফুলের বাগান। সেখানে নানা রকম ফুল ফুটে আছে। এসব ফুলের নাম অনিলার জানা নেই।প্রাসাদের বাহিরে কিছু ফুটফুটে বাচ্চারা খেলছে। কিন্তু অনিলা কে দেখে সবাই খেলা থামিয়ে তাকিয়ে আছে। অনিলার কেমন যেনো ভয় ভয় লাগছে।
--"
আপনি ভয় পাবেন না। এখন থেকে এটাই আপনার ঠিকানা।
আহমাদ অভয় দেয়। অনিলা আহমাদের দিকে তাকিয়ে ভাবে, ছেলেটা এতো সুন্দর করে কিভাবে কথা বলে!
অাফসানা প্রাসাদের ভেতরে গেছে আহমাদ আর অনিলাকে বাহিরে রেখে। খাবরি আসাদ একটা কাঁচের ঘরে রাশিদ বেগকে বন্দী করে রেখেছে। সোলায়মান বেগ এবং তার ছেলে সালমান বেগ এর বিচার করবেন।

অনিলা প্রাসাদের মুখ্য দরজার দিকে তাকিয়ে দেখে সেখানে মানুষ আকৃতির অনেক মহিলা আর পুরুষ দাড়ানো। তাদের মধ্যে থেকে দুজন অনিলার দিকে এগিয়ে আসছে। আহমাদ এখনো অনিলার পাশেই আছে। 
--"
সু-স্বাগতম তোমাকে। তুমি কেমন অাছো বিলকিস?"
তাদের মধ্যে একজন ভীষণ সুন্দরী মহিলা অনিলাকে জড়িয়ে ধরলো। তার কাছ থেকে সুন্দর ঘ্রাণ আসছে অনিলার নাকে। অনিলা কিছু না বলে মহিলাটির দিকে তাকিয়ে থাকে।
--"
উনি আমাদের দাদিজান। সালাম দিন উনাকে।
আহমাদ মুচকি হেসে অনিলাকে ফিসফিসিয়ে বলে। সালাম বিনিময় করে মহিলা দু'জন তাকে প্রাসাদের ভেতরে নিয়ে যান। অনিলা বুঝতে পারলো এদের একজন নিশ্চয়ই আহমাদ আর আফসানার আম্মিজান।

প্রাসাদের ভেতরটা অনিলা মুগ্ধ দেখতে থাকে। বিশাল বড় একটা ঝর্ণা এখানে। কিন্তু ঝর্ণা থেকে কোনো পানি পড়ছেনা। বিভিন্ন রকমের মনি মুক্তা ঝরে পড়ছে সেখান থেকে।
পুরো প্রাসাদ জুড়ে সুন্দর সুন্দর আসবাব।ভারী ভারী পর্দা। দামী কার্পেট। একেক টা জিনিস থেকে একেকটা জিনিস সুন্দর। অনিলা বুঝতে পারেনা সে কী রেখে কী দেখবে!!

আফসানা অনিলাকে আরেকটি ঘরে নিয়ে যায়। সেখানে বিশাল পালংকের উপর একজন নুরানী চেহারার বৃদ্ধ আধশোয়া হয়ে আছেন।
--"
উনি আমাদের দাদা জান। আপনি উনার আদরের নাতনি। উনার কাছে যান। উনি অধীর আগ্রহে আপনার জন্য অপেক্ষা করছেন।"
আফসানা অনিলাকে সোলায়মান বেগের কাছে এগিয়ে দেয়। আহমাদ কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে আছে। তাকে দেখে মনে হচ্ছে সে তার দাদাজানের সামনে যেতে লজ্জা পাচ্ছে। 
--"
কাছে এসো আমার আদরের নাতনি।"
নানা সোলায়মান বেগের কন্ঠ শুনে অবাক হয়ে যায় অনিলা। বৃদ্ধ বয়সেও এতো ভরাট কন্ঠ!!
অনিলা তার পাশে যেয়ে বসে। সোলায়মান বেগ অনেক কথা বলেন। কিছুক্ষণ পর সালমান বেগও আসেন তার পিতার কাছে।

#
সোলায়মান বেগের কক্ষে এখন প্রায় সবাই আছেন। তিনি একে একে সবাইকে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন অনিলার সাথে। কিন্তু অনিলার মনে তার নিজের পিতা মাতার চিন্তা ঘুরছে। তারা এখন কোথায় আছে? অনিলার সাথে কি তাদের দেখা হবেনা?

আফসানা অনেক গুলি খাবার নিয়ে অনিলার সামনে আসে। এখানে মহিলাদের মধ্যে সবাই আছে। কিন্তু অনিলার এখন খেতে ইচ্ছা করছেনা। সে অন্যমনস্ক হয়ে বসে আছে। 

হঠাৎ একজন মহিলার কথা কানে আসে তার। সে বলছে, সোলায়মান বেগ নাকি কিছুদিন আগেই পুরো সমাজে ঘোষণা দিয়েছেন অনিলাকে বিয়ে করবে এমন শক্তিশালী জ্বীন পুরুষের জন্য। কিন্তু কেও নাকি রাজি হচ্ছেনা।কারন সে অর্ধমানব! তাদের সবার মতো তার মাতা বাবা দুজনই জ্বীন নয়। 
অনিলার কাছে এবার সব কিছু পানির মতো পরিস্কার হয়ে।
কিন্তু কথাটি কানে আসার পর অনিলার খারাপ লাগে। কারণ সে এখন তার জীবনসঙীর জায়গায় আহমাদকে ছাড়া কাউকে দেখতে চায়না। কিন্তু আহমাদ কি এমন কিছু ভেবেছে অনিলাকে নিয়ে? অনিলা তার আশেপাশে আহমাদ কে খুঁজে। কিন্তু সে এখানে নেই। অনিলার প্রচুর অভিমান হয় অাহমাদের উপর!

আহমাদ তার দাদা সোলায়মান বেগের পাশে বসে আছে। সালমানবেগ আছেন। রাশিদ বেগের সমস্ত বদ কীর্তি বাবা আর দাদার কাছে খুলে বলেছে আহমাদ। সোলায়মান বেগ খুব মনে কষ্ট পেলেন এসব শুনে। তিনি ভেবেছিলেন রাশিদ বেগ শুধরে গেছে। কিন্তু এখন তিনি নিজের ভুল বুঝতে পেরেছেন। তিনি সোলায়মান বেগ কে বললেন রাশিদ বেগ কে যেনো সে মৃত্যুদন্ড দেওয়া হয়। সমাজ প্রাধাণের পুত্র কে হত্যার চেষ্টা করা গুরুতর অপরাধ। এর কোনো ক্ষমা নেই।
সালমান বেগ তার পিতাকে জানালেন, চাঁদ পূর্ণ হওয়ার সাথে সাথে রাশিদ বেগের মৃত্যুদণ্ডের আদেশ কার্যকর করতে হবে। কিন্তু আরো দুটি বিশেষ কাজ এই দিনেই করতে হবে। কারণ অমাবস্যা শুরু হয়ে গেলে জ্বীন সমাজের বিশেষ কার্যক্রম গুলি করা যায়না, একেবারে নিষেধ।
সালমানবেগের কথা শুনে তার পিতা চিন্তায় পড়ে গেলেন। এই পূর্নিমাতে তার একমাত্র নাতি আহমাদ বেগ পরবর্তী সমাজ প্রধাণের দায়িত্ব নিবে। কিন্তু জ্বীন সমাজের নিয়ম অনুযায়ী সমাজ প্রধাণ কে বিবাহিত হতে হয়।
অার তার নাতনীর জন্য এখনও কোনো ক্ষমতাশালী জ্বীন পুরুষ বিয়ের জন্য এগিয়ে আসেনি। সোলায়মান বেগ কি করবেন ভেবে পাননা!
অনিলা কে একটা আলাদা কক্ষ দেয়া হয়েছে।খুবই সুন্দর তার এই নতুন ঘর। কি নেই এখানে!
অনিলা তার ঘরে এসে আরাম করছে। তার চোখ ঘুমে লেগে আসছে। কিছু একটার শব্দে অনিলার চোখ খুলে যায়। সে তাকিয়ে দেখে আহমাদ তার পালংকের পাশে দাঁড়িয়ে আছে। আহমাদ একটি কালো পাঞ্জাবি পড়া। মাথায় কালো রঙের পাগড়ি বাধা। চোখে হালকা সুরমা লাগানো তার। আহমাদকে দেখে অনিলার মনে হচ্ছে সে যুগ যুগ ধরে যেনো এই পুরুষটি কে পাওয়ার জন্য অপেক্ষায় ছিলো। 
আহমাদ হালকা কাশি দিলো। অনিলা নিজের বোকার মত চেয়ে থাকার কারণে লজ্জা পেয়ে গেলো। সে তাড়াতাড়ি করে উঠে দাঁড়ালো। এবার তার উচ্চতা অনেকটা আহমাদের মত
আহমাদ মুখ খুলে কিছু বলার জন্য৷
-"
আমি আপনাকে কিছু বলতে চাই।" আহমাদ একথা বলে অনিলার কক্ষের দরজার দিকে তাকায়। আর সেটা সাথে সাথে বন্ধ হয়ে যায়।
--"
আমি আপনাকে তখন থেকে আমার জীবন সঙিনী করতে চাই যখন থেকে আপনার বয়স চল্লিশ দিন। আমি আপনাকে ছাড়া কোনোদিন কোনো জ্বীন বা ইনসান মেয়েকে কল্পনাও করিনি। আমি জানিনা আপনি আমার ব্যপারে কি ভাবছেন।
এত টুকু বলে আহমাদ থেমে গেলো। 
তার মনে হলো কেউ যেনো কক্ষের বাহির থেকে তাদের কথা শুনেছে। অনিলা নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। তার বিশ্বাস হচ্ছেনা, যাকে সে এতোটা চায়, সেই ব্যাক্তি বহু অাগে থেকেই তার প্রেমে পড়ে আছে!
অনিলার মনটা খুশিতে ভরে যায়। সে আহমাদের দিকে তাকায়। আহমাদ বড় বড় চোখ করে অনিলার দিকে চেয়ে আছে। কিন্তু অনিলা কিছু বলছেনা।
--"
কিছু বলছেন না যে?" 
আহমাদের কন্ঠে এবার ভয়ের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। সে ভয় পাচ্ছে অনিলা যদি না করে দেয়!
--"
আমার ভাবতে হবে বিষয়ে। অামি এতো দ্রুত কোনে সিদ্ধান্ত নেই না কখনো।"
অনিলা গম্ভির ভাব নিয়ে আহমাদ কে উত্তর দেয়। আহমাদের মুখ কালো হয়ে যায়।
--"
ঠিক আছে।আপনি সময় নিন।
আহমাদ মুখ ভার করে ঘর থেকে বেড়িয়ে যায়।
অনিলা মনে মনে ভীষন হাসছে। সে নিজেইতো অাহমাদের জীবনসঙী হওয়ার জন্য অপেক্ষা করছে। কিন্তু মেয়েদের কি এতো জলদি হ্যা বললে চলে!!

আহমাদ জেনে গেছে, তার দাদা সোলায়মান বেগ অনিলার জন্য জ্বীনপাত্র খুঁজছেন। এবং তাকেও বিয়ে করাবেন খুব দ্রুত। সব মিলিয়ে আহমাদের মন খুব খারাপ হয়ে অাছে। অনিলা যদি তাকে বিয়ের জন্য রাজি না হয়, সে অার কোনো দিন বিয়ে করবেনা।

আফসানা তার ভাইয়ের কক্ষে অাসে। ভাইয়ের মন খারাপের ব্যপারে জিজ্ঞেস করে। আহমাদ বোন কে সব বলে। অনিলার কথা শুনতেই আফসানা হাসিতে ভেংগে পড়ে। সে ভাই কে বুঝায় যে অনিলাও তাকে খুব পছন্দ করে। কিন্তু কোনো মেয়েই এসব ব্যাপারে এত দ্রুত হ্যা বলবেনা। সে ভাইকে শান্তনা দেয়। আফসানা ভাই কে জিজ্ঞেস করে,
--"
আচ্ছা ভাইজান, যদি এমন হয় জ্বীন সমাজ যদি বলে,আপনি বিলকিস কে বিবাহ করলে সমাজ প্রধাণ হিসেবে দায়িত্ব পাবেন না। তখন কি করবেন। হুম?
--"
অবশ্যই আমি বিলকিস কেই বিবাহ করবো। কারন শরীয়তের দিক থেকে তাকে বিয়ে করতে কোনো রকম বাধা নেই।
অাহমাদ সাথে সাথে উত্তর দিলো।
--"
তাছাড়া আমার সমাজ প্রধান হওয়ার কোনো ইচ্ছা নেই। অামি শুধু বিলকিসকে তার পিতা মাতার সাথে দেখা করিয়ে দেওয়ার জন্য সমাজ প্রধান হতে চাই। ইন শা অাল্লাহ, আমি প্রধাণ হলেই তাদের কয়েদ থেকে মুক্ত করে দিবো। অনিলাকে আর আর মাতা পিতার স্নেহ হতে বঞ্চিত হতে হবেনা।"
ভাইয়ের কথা শুনে আফসানার চোখে পানি এসে যায়। যেভাবেই হোক, সে তার ভাইয়ের সাথেই অনিলার বিবাহ করিয়ে দিবে।
#
আজ ভরা পূর্নিমা। অাহমাদ অার অনিলা সমুদ্রের উপর ভেসে বেড়াচ্ছে। তারা দু'জনে দুজনের হাত শক্ত করে ধরে রেখেছে। আজ দুপুরেই তাদের বিয়ে হয়ে গেছে। 

সোলায়মান বেগ প্রথমে রাজি হননি। কিন্তু পরে আফসানা তাকে খুব করে বুঝিয়েছে, বিলকিসের জন্য আহমাদ বেগের চেয়ে ভালো এবং শক্তিশালী জ্বীন পুরুষ অার কোথাও পাওয়া যাবেনা। সোলায়মান বেগ এবং নার্গীস বেগও আর কোনো দ্বিমত পোষণ করেন নি।অার আহমাদের দাদীজান তো খুব খুশি এই বিয়েতে।
রাশিদ বেগের মৃত্যু দন্ড আরো কয়েকদিন অাগেই কার্যকর হয়ে গেছে। তাকে তার বেইমানির সঠিক শাস্তি দিয়েছেন সালমানবেগ এবং তার পিতা সোলায়মান বেগ।
রাশিদ বেগের মৃত্যুর পর অাহমাদ সমাজ প্রধাণের দায়িত্ব গ্রহন করে। দায়িত্ব পাওয়ার পর সবার আগে সে তার ফুফু সাবরিন আর তার মানব স্বামী শোয়েবকে কয়েদ থেকে মুক্ত করে। সাবরিন তার কন্যাকে পেয়ে সব দুঃখ কষ্ট ভুলে যায়। সোলায়মান বেগ তার মেয়ে আর মেয়ের জামাইকে তার কাছেই রেখে দেন৷ 
অনিলা খিল খিল করে হাসছে। সে আহমাদের হাত ছেড়ে দিয়ে উড়ে উড়ে দূরে চলে যাচ্ছে। আহমাদ তাকে আবার শক্ত করে ধরে ফেলছে। আহমাদ তাকে দুষ্টমি বলছে,
--"
আপনার এতো বড় দুঃসাহস! আপনি জ্বীন প্রধানের কয়েদ হতে পালিয়ে যাচ্ছেন!"
আহমাদের এই কথা শুনে অনিলার হাসি আরো বেড়ে গেছে। সে খিল খিল করে হেসেই যাচ্ছে। আহমাদ মনে মনে চাচ্ছে তার এই প্রাক্তন প্রতিবেশী যেনো সারা জীবন এভাবেই খিল খিল করে হাসতে থাকে।




সমাপ্ত 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

বেশি বার পড়া হয়েছে

একজন রিক্সা-ওয়ালা