প্রজাপতির জঙ্গল যাত্রা – পর্বঃ০১

গল্পঃ"প্রজাপতির জঙ্গল যাত্রা "
লেখকঃ মোঃ শাওন  

(প্রথম পর্ব)


স্টেশনে ট্রেন দাঁড়িয়ে আছে। চারিদিকে মানুষের গাদাগাদি,কোন দিকে কুলি মালপত্র নিয়ে যাচ্ছে আবার কেউবা ট্রেনের কামরায় সিট খুঁজছেন। বাইরে সতর্কবাণী প্রচার হচ্ছে -অপরিচিত যাত্রীর প্রদানকৃত কোন ধরনের দ্রব্য গ্রহণ করিবেন না। এর মধ্যে ভিড় বাঁচিয়ে আলতোভাবে হেলতে-দুলতে হেঁটে এসে একজন ২৬-২৭ বছরের যাত্রী হাতে দুকাপ চা নিয়ে ফার্স্ট ক্লাস কেবিন এর জানালা দিয়ে ভিতরে পার করিয়ে দিলেন। ট্রেনের ফাস্ট ক্লাস কেবিনে বসে প্রচণ্ড গরমেও, গরম চায়ে চুমুক দিয়ে আত্মতৃপ্তিতে বাহ বলে ওঠা লোকটি হলেন ইকবাল হোসেন। মাথার সাথে সেটে ছোট চুল ,মুখে হালকা দাড়ি গোঁফ আছে ,যেমন ফুরফুরে মেজাজ ঠিক তেমনি চনমনে চেহারা। আফসোস শুধু একটাই বিধা তার উচ্চতা একটু কম করেছেন। শারীরিকভাবে স্বাস্থ্যের অধিকারী। খাওয়া দাওয়ার প্রতি বিশেষ চাহিদা রয়েছে। প্রায় পনেরো বছর ব্যাংকে চাকরি করার পর এখন ব্যাংকের চাকরি বাদ দিয়ে ব্যবসা করবেন তা চিন্তা করেছেন। সামনের সিটে যে ভদ্রলোক বসে আছেন উনি হচ্ছেন বীর বরেন্দ্র। বয়স ৪০-৪২ হবে। বাবা শখ করে নাম রেখেছিলেন বীর বরেন্দ্র। নামের সাথে শারীরিক বৈশিষ্ট্য মিল পাওয়া যায়। বলিষ্ঠ চেহারা। কথাবার্তায় দৃঢ়তার ভাব দিব্যি বোঝা যায়। মুখে কোন দাড়ি-গোঁফ নেই তবে কপালের ডান দিকে একটা সেলাইয়ের দাগ আছে। তার চায়ের কাপটা পাশে রেখে বইয়ের ভেতরে তাকিয়ে আছেন। বইটা হলো শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা একটা উপন্যাস। জানালা দিয়ে যে ভদ্রলোক চা পার করিয়ে দিলেন তিনি হচ্ছেন প্রজাপতি চৌধুরী। বাবা মায়ের বিপুল সম্পত্তি থাকার পরেও তার প্রতি কোনো প্রকার ভক্তি না দেখিয়ে নিজেই কিছু করবার আশায় বর্তমানে একটা পত্রিকার সহকারি এডিটর হিসেবে কাজ করছেন। এই তিনজনের যাত্রা হচ্ছে দৌলতপুরের উদ্দেশ্যে। তাদের সাথে এই স্টেশনে যোগ হচ্ছে আরো একজন সহযাত্রী ‘ভূপতি সরকার’। কেবিনে প্রবেশ করেই ভূপতি তার মালপত্র বসবার সিটের নিচে রাখলো। ছোট করে ছেঁটে কাটা চুল, মুখে হালকা দাড়ি-গোঁফ হয়েছে, সুপুরুষ চেহারা, পরনে পাঞ্জাবি পায়জামা,বয়স ৩৫-৪০ এর মত হবে। এই চার প্রাণীকে কেবিনে নিয়ে ট্রেন চলল দৌলতপুরের উদ্দেশ্যে। এই চারজনের যাত্রার উদ্দেশ্য হলো দৌলতপুরের বিশাল জঙ্গল ভ্রমণ করা। এই চারজনের মধ্যে সম্পর্ক হল বির বরেন্দ্র হলেন প্রজাপতির চৌধুরীর মামাতো ভাই ও ইকবাল হোসেন হলো প্রজাপতির বন্ধু এবং ভুততি সারকার হলেন প্রজাপতি চৌধুর এর বস। অনেক বলার পরে প্রজাপতি তাকে তার গ্রাম এর বাড়ি দৌলতপুর এর বন এবং ময়ূর দেখানোর জন্য ঘুরতে নিয়ে যাচ্ছে।
একটানা ১১ ঘন্টা যাত্রাপথে কাটানোর পরে তারা সবাই অত্যন্ত ক্লান্ত হয়ে সন্ধ্যার কিছু পূর্বে পৌঁছালো প্রজাপতির গ্রামের বাড়ি। পুরানো আমলের বাড়ি, পূর্ব-পশ্চিম উঠে গেছে একটা সিঁড়ি দোতলা পর্যন্ত এবং দোতলার বারান্দা লোহার রেলিং দ্বারা বাঁধানো। একটা বেশ পুরানা চাকর আগে থেকেই সেখানে উপস্থিত ছিল সে আগেই সবার খাবার দাবারের ব্যাবস্থা করে রেখেছিল, দেরি না করে সন্ধ্যার খাবারটা সেরে শুয়ে পড়ল তারা সবাই। একটা ঘরে থাকলেন ভূপতি সরকার এবং অন্য একটা করে ঘরে থাকলেন ইকবাল হোসেন আর প্রজাপতি। নিচতলার একটা করে রইলেন বীর বরেন্দ্র।
প্রজাপতির কিছুতেই ঘুম আসছে না , তার ঘরের মধ্যে এদিক ওদিক হাটাহাটি দেখে
-কি হয়েছে? ইকবালের এই প্রশ্ন করায় প্রজাপতি কেমন জানি একটু চমকে উঠলো।
- কিছুনা, শুধু ঘুম আসছে না। তুমি ঘুমাওনি এখনও?
-ঘুম হতে আর দিলে কই , লাইট জ্বালিয়ে রাখলে কি ঘুম হয়।
-ও দুঃখিত আমি বন্ধ করে দিচ্ছি শুয়ে পড়ো তুমি।



টেবিলের উপরে রাখা চায়ের কাপটা হাতে তুলে নিয়ে বসবার ঘরের জানালা দিয়ে বাহিরের জঙ্গল টার দিকে তাকিয়ে ,ভূপতি সরকার বললেন -বেশ বড় জঙ্গল। ইকবাল খাদ্য রসিকতার পরিচয় দিয়ে সামনে একটি টেবিলে রাখা আরো এক বাটি পায়েস, মিষ্টি বলা যায় তুলে নিয়ে খেতে আরম্ভ করে দিলেন আর খাওয়ার সাথে সাথে সবার কথাগুলো যেন নিজের ভেতরে নিয়ে চলেছেন।
ভূপতি সরকারের কথা শুনে বীর বরেন্দ্র বলে উঠলেন- ৪00 বছরের পুরনো জঙ্গল অনেক রকমের জন্তু-জানোয়ার আছে জঙ্গলে। এমন কিছু কিছু বিরল জাতের পাখি দেখা যায় যা শুধুমাত্র এখন এইখানেই পাওয়া যায়, বিলুপ্তপ্রায় তারা। কিন্তু আমাদের জঙ্গলের একটা বিশেষত্ব আছে ,জানেন এই জঙ্গলে একটা কথিত কাহিনী আছে, এইখানে নাকি সোনার ময়ূর বা সোনালী ময়ূর দেখা যায়, গ্রামের অনেকেই দাবী করেন যে তারা একাধিকবার দেখেছেন, এমন কোন সোনালী ময়ূর আছে বলে তো আমার জানা নেই আর হয়তোবা বিশ্বাস করবেন না গ্রামের কিছু কিছু লোক ওইটাকে বৃষ্টির দেবতা হিসেবে………… আর কি বলি । তবে আমার দাদু নাকি একবার সেটাকে দেখেছিলেন। সে কখনো মিথ্যে কথা বলেন না, সেজন্যই আমি না দেখা সত্বেও তার কথাকে সম্পূর্ণ বিশ্বাস করে নিয়েছিলাম। বহুকাল থেকে আর শুনি নাই কিন্তু কিছু দিন পূর্বেই গ্রামে আবার কথা শুরু হয়েছে যে ময়ূর নাকি আবার দেখা যাচ্ছে। তবে এখানকার সাধারণ ময়ূর গুলো কিন্তু অনেক সুন্দর কিছু হরিণ রয়েছে আজ বিকেলে না হয় আমরা তো বের হচ্ছি, দেখা যাক কিছু একটা দেখা যায় কিনা।
দুপুরটা গরিয়ে যেতেই তারা সকলেই বের হলো জঙ্গলের ঢুকবার ভাগটা একবার ঘুরে দেখবে বলে। ঘাসের বুক চিরে চলেছে আঁকা বাঁকা পথ, প্রচন্ড গরমের তাপদাহে চারিদিকের পরিবেশ টা বাদামী হয়ে উঠেছে ,সূর্যের ভালো তেজ আছে কিন্তু ফুরফুরে বাতাসের কারণে তা গায়ে ধরছেনা। বনের গাছের পাতা গুলো কেমন ম্যাচ ম্যাচে হয়ে গেছে। কিছু শালিক,বেশ কয়েক রকমের বনটিয়া, কাঠঠোকরা পাখি, আর দূর থেকে ছোট একটা হরিণ তারা দেখতে পেল। সুর্য ডুবুডুবু ভাব। বনের মাথার ওপর,এর মধ্যেই নুয়ে পড়েছে সূর্যটা। তাই সবাই বাড়ির উদ্দেশ্যে উল্টো পথে যাত্রা করছে।
ভূপতি সরকারের মনটা কেমন উসখুশ করছে। অস্বস্তি একটা ভাব নিয়ে বলতে শুরু করলেন- ও প্রজাপতি তোমার মামাতো ভাই বললেন এখানে নাকি ময়ূর দেখা যায়, ময়ূর কি আমরা দেখব না। জঙ্গল থেকে এতটা বেশি দূরে থাকলে কি আমরা দেখতে পারবো।
ভূপতি মাথার মধ্যে কি সব কথা চিন্তা করছে এর মধ্যেই পাশে থেকে একটু নিচু গলায় চাকর রবি বলে উঠলো -আপনারা যদি কিছু মনে না করেন তবে আমার গরীব খানায় থাকতে পারেন। এই সামান্য একটু পথ হেঁটে গেলে আমার কুঠি। পাশাপাশি জোড়া লাগানো ছটা ঘর আছে বাবু। তাতে করে থাকার কোন অসুবিধা হবে না। যদি আপনারা কিছু মনে না করেন, আপনারা থাকতে পারেন। মাটি আর খড়ের চালের ঘরে না হয় দুটো দিন কাটিয়ে দেখেন।
কথা শুনে পাশ থেকে বীর বরেন্দ্র-“যদি ভূপতি বাবু সম্মতি দেন তবে থাকার কথা চিন্তা করা যেতে পারে।“
-“এতে আমার বলার কি আছে, আমি ভূপতি সবখানেই থাকতে পারি। তবে এ কথাই রইল। আজ রাতটা আমরা তোমার কুঠিরে কাটাচ্ছি।‘
-“আপনারা আমার কুটিরে!……… জানেন আমার সৌভাগ্য বাবু ,চলেন।“
রবির বাড়ির সামনের বারান্দা থেকে দিব্যি জঙ্গলটা ভালই দেখা যাচ্ছে। এখনো সূর্য ডুবতে মিনিট 15-20 বাকি আছে। মাটির ঘরের সামনে উঁচু বারান্দায় বসে তারা সকলে চানাচুর খাচ্ছে। বানাবো মিষ্টির প্রতি একটু বেশি সদয় হয়েছেন ইকবাল। পাশে রাখা কদমা আর বাতাসার পাখিটা তুলে নিয়ে এক কামড় দিয়ে দিলেন- আহা কতকাল পরেই মিষ্টি বাতাসা খাচ্ছি। শহরের ইট পাথরের জঙ্গলে এই বস্তু পাওয়া আসলেই দুর্লভ।
সবার কথার ফাঁকে ভুবতি সরকার কিন্তু একদৃষ্টে তাকিয়ে আছেন জঙ্গলের দিকে। প্রজাপতি নিজ হাতে চা এনেছ দেখে ভূপতি বললেন- ‘এত কষ্ট করবার প্রয়োজন নেই প্রজাপতি, আমি এখানে তোমার বস না, অফিসের বাইরে আমিও তোমার মতন একজন সাধারন মানুষ।“ প্রতিউত্তরে ভূপতি শুধু একটা হাসি দিয়ে জবাবটা বুঝিয়ে দিল।
পাশে থেকে রবি দাঁড়িয়ে বলছে- “আমিই নিয়ে আসতে চেয়েছিলাম কিন্তু বাবু দিলেন না। বুঝলেন বাবুর মনটা অনেক বড়।“ “বাবু আপনারা বসেন আমি খাবারটা একটু দেখি। আজ রাতে মুরগি ভুনা খান, আগামীকালকে রুই মাছের ঝোল খাওয়াবো।“
প্রজাপতি রবির এক কাঁধে হাত দিয়ে বলল- “খাবার নিয়ে এত চিন্তা করো না, তোমার যেটা হয় সেটাতেই আমরা সন্তুষ্ট্ ,খাওয়ার নিয়ে আমাদের তেমন কোন সমস্যা নেই।“
রাতের খাওয়াটা সেরে সকলেই বসেছে তার জীবনের ছোট ছোট অভিজ্ঞতার গল্প নিয়ে।কেউ হাসছেন কেউবা আফসোস করছেন। এরমধ্যেই ভূপতি বলে উঠলেন-“তোমাদের এই জঙ্গলে বাঘ বুঝি নেই।‘
প্রজাপতি-“আসলে ঠিক তেমনটা না।জঙ্গলের এই দিকটাই বাঘ নেই। জঙ্গলটার মাঝ বরাবর একটা নদী চলে গেছে। নদী জঙ্গল টাকে দুই ভাগে ভাগ করে দিয়ে থাকে। চোরাশিকারির উৎপাতের কারণে এদিকের বাঘ শেষ। ফরেস্ট গার্ড এর তথ্য অনুযায়ী এই দিকে আর কোন বাঘ নেই তবে নদীর ওইদিকে এখনো ৩৫ থেকে টা জীবিত আছে। তাছাড়া এই দিকটাতে গ্রাম বেড়ে গেছে সেজন্য মানুষ ঢোল-তবলা পিটিয়ে সব খেদিয়ে ওই দিকটাতে পাঠিয়ে দিয়েছে।“
প্রজাপতির অ্যাডভেঞ্চারের নেশাটা আগে থেকেই প্রবল। তবে মনের দিক দিয়ে সে খুব কোমল মানুষ।প্রকৃতির প্রতি তার অনুরাগ ও ভক্তি দেখবার মতো।
রাস্তার আগে আগে জঙ্গলের মধ্যে সবার প্রতিনিধিত্ব করে হাটছে রবি, কারণটা জঙ্গলের পুরো রাস্তায় তার চেনা। কিছু কিছু জায়গায় সূর্যের আলো মাটিতে পড়ছে না। দূর থেকে ভেসে আসছে কোকিলের মিষ্টি সুর, আশপাশ দিয়ে গিরগিটি ও কাঠবিড়ালী দৌড়ে পালাচ্ছে। মট মট শব্দ করে পড়ে থাকা শুকনো ডাল পাতার স্তুপ ভেঙে সবাই এগিয়ে চলেছে জঙ্গলের ভেতরের দিকটায়। শুকনো পাতার ও কিছু ফুলের সুবাস মিশিয়ে সুকোমল এক বাতাস যেন মৃদুভাবে বয়ে চলেছে। পুরো জঙ্গলময় যেন অক্লান্ত পরিশ্রম করে জীবিত হয়ে উঠেছে আর তার সাথে বয়ে চলেছে তার মৃদু মৃদু শ্বাস-প্রশ্বাস। সবার আগে রবি তারপরে ভূপতি ও প্রজাপতি এবং তাকে অনুসরণ করছেন ইকবাল , সবার শেষে বীর বরেন্দ্র হাতে একটা দোনালা বন্দুক নিয়ে চলেছেন। যদি কোন প্রয়োজন হয় শব্দ করে জন্তু-জানোয়ার কে ভয় দেখিয়ে দূরে পাঠানোর জন্য রবি তার বাড়ি থেকে বংশ ক্রমে পাওয়া পুরনো বন্দুকটা নিয়ে এসেছে। একে একে বৃক্ষের মহা প্রাচীর ভেদ করে যেন ক্রমেই তারা জঙ্গলের ভেতর থেকে আরো ভেতরে চলে যাচ্ছে।

প্রজাপতির জঙ্গল যাত্রা

এরমধ্যেই অনেকটা সময় পার হয়ে গেছে সবার মধ্যে একটু হলেও ক্লান্তির ভাব এসেছে, একটু বিশ্রাম জরুরী হয়তোবা সেই কথা ভেবেই প্রজাপতি বলল-“কোথায় একটু বসা যাক।“ তারা সবাই সহমত পোষণ করে কিছু এবড়োখেবড়ো বড় আকারের পাথরের উপরে ঠেস দিয়ে বসলো। এরই মধ্যে ভূপতি সরকার অদূরে কিছু হরিণ দেখতে পেলেন, হরিণ দলপতি খানিকক্ষণ একদৃষ্টে সবার দিকে তাকিয়ে থেকে তাদের বিশেষ এক ধরনের আওয়াজ করে দলের নেতৃত্ব প্রদান করে, বিপরীত দিকে অগ্রসর হয়ে চলে গেল। কিছু সময়ের ব্যবধানেই হরিণ গুলো সব হারিয়ে গেল। অদূরে কোথাও এক জায়গায় কোন এক পাখি তার বিরহ সুরে প্রকৃতির কাছে করুন নালিশ জানাচ্ছে। যেন কেউ তার সঙ্গীকে অবিচারে তার থেকে আলাদা করে দিয়েছে।
হাতের ডানে একটা বুনো ফলের গাছ দেখে রবি সজোরে বলল-“জঙ্গলে এসেছেন আর জঙ্গলের কিছু খাবেন না”। হাত তুলে দেখিয়ে দিয়ে বলল-“ওই যে গাছটা দেখতে পারছেন,সেটা একটা ফলের গাছ ওই ফলটা খাওয়া যায্, কিছুটা নোনতা মিষ্টি ভাব মেশান স্বাদ।“ সবাই মিলে কিছু ফল গাছ থেকে পেড়ে তৎক্ষণাৎ খাওয়া হলো এবং বাকি কিছু ফল সাথে ব্যাগের মধ্যে নিয়ে নেয়া হলো, পরে খাওয়ার জন্য।
আশপাশ দিয়ে বানরের একদল এসে এক হুলুস্থুল বাধিয়ে দিল, হয়তোবা তাদের এলাকায় অপরিচিতের অনুপ্রবেশ মোটেও পছন্দ হয়নি। সেখানে আর বেশি সময় অপেক্ষা না করে ঠিক হলো কোন দিকে যাওয়া হবে।
ক্লান্ত দুপুরের পথে সবাই হাঁটছে এমন সময় মিষ্টি এক ধরনের ডাক শোনা গেল। এরসাথে জঙ্গলটা একটু হালকা হয়ে এসেছে। রবি বলে উঠলো-“সবাই স্থির হয়ে যান। আশেপাশে ময়ূর আছে। তাদেরকে ভয় না দেখিয়ে তাদের নৃত্য উপভোগ করুন। তবে চোখ কান খোলা রাখবেন। জঙ্গল মোটেও নিস্তব্ধ থাকে না মনে রাখেন ভয়ঙ্কর জন্তু-জানোয়ারের রাজত্বে আছেন আপনি।“ সবাই একদৃষ্টে তাকিয়ে রইল একটা নয় দুটো নয় মোটের উপরে ১৮ থেকে ২০ টা ময়ূর এক দল বেঁধে চলেছে, সচরাচর ময়ূরকে এইভাবে দলে দেখা যায় না। কেউ যেন তার ময়ূর মেলিয়া নৃত্য প্রদর্শন করছে আর কিছু যেন গাছের উপরে তার মিষ্টি মধুর সংগীত প্রদর্শন করছে।
ফেরার পথে ইকবাল ব্যাগ থেকে একটা ফল বের করে খচখচ দুটো কামড় বসিয়ে দিয়ে বললেন-“আসাটা সার্থক হল।ময়ূর দেখলাম,হরিণ দেখলাম,কত রকমের পাখি রে বাবা।ওই প্রজাপতি তোমাকে ধন্যবাদ আমাকে ডাকার জন্য” । ভূপতি সরকার তার কথা শুনে- ‘’শুধু যে দেখাই হল। কোন রোমাঞ্চের অনুভূতি পেলাম না। রোমান্স একটা নেশা। এটা প্রতিবার আগের থেকে তীব্র প্রয়োজন হয়। আমি ভারতের বিভিন্ন জঙ্গলে ঘুরেছি, হাইকিং দলেও বেশ কিছু সময় কাটিয়েছি। যাকগে ওসব কথা।“ এমন সময় একটা বন্দুকের তীব্র গুলির শব্দে জঙ্গলটা চঞ্চল হয়ে উঠল। চারিদিকে পাখি উড়ে চলে যাচ্ছে,বানরগুলো তীব্রস্বরে ডাকতে শুরু করে দিয়েছে। রবি বলল –“সবাই এখান থেকে দ্রুত চলেন আশেপাশে শিকারীর দলআছে। আমার হাতে বন্দুক আছে, ফরেস্ট গার্ড দেখলে সমস্যা হবে।“

The End  

Credit By :  Mohammad Shawon

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

বেশি বার পড়া হয়েছে

একজন রিক্সা-ওয়ালা