গল্পঃ ভ্রমন যাত্রা
লেখকঃ অভ্র আরিফ
- ‘আপনি বসুন। দাঁড়িয়ে আছেন কেন?’ মেয়েটি অনুযোগের স্বরে বললো।
- আসলে আমি দাঁড়িয়েই কমফোর্ট ফিল করছি। তাছাড়া অনেকক্ষণ বসে থেকে থেকে হাত পা খিল ধরে গেছে।
- আপনিতো বসলেনই না মোটে। সেই কখন থেকে দাঁড়িয়ে আছেন। আমার পাশে বসতে কী আপনার অস্বস্তি হচ্ছে?
মনে মনে ভাবলাম, এই মেয়ে এতো কথা বলে কেন? আমার বিরক্তি হতে শুরু করলো। সুন্দরী মেয়েদের একটা না একটা প্রবলেম থাকবেই। হয় সে বোকা বোকা কথা বলবে, নাহয় অতি চালাকী দেখাতে গিয়ে বেশি বেশি কথা বলবে। এই মেয়ে বেশি কথা বলছে। আমি দাঁড়িয়ে যাই অথবা বাসের ভিতরে দৌড়াই তাতে ওর কী? আমিতো আর পাশের সিটে বসে ঘুমোতে ঘুমোতে তার ঘাড়ে মাথা এলিয়ে দিচ্ছি না।
- অস্বস্তি হবে কেন? আই অ্যাম ওকে। আসলে যুতসই কোনো জবাব না পেয়ে আমাকে বসতে হলো মেয়েটার পাশেই।
- কক্সবাজার যাচ্ছেন কেন? বেড়াতে?
- নাহ্! ট্রেনিং আছে। ওখানে বিয়াম ফাউন্ডেশনে সপ্তাহখানেকের জন্য একটা ট্রেনিংয়ে যাচ্ছি। আপনি? বেড়াতে যাচ্ছেন বুঝি?
- আরে না। একটা তরুণী মেয়ে একা একা কক্সবাজার বেড়াতে যায় বুঝি?
- তাহলে?
যাত্রা |
- আমার বাসা কক্সবাজারেই। ওই বিয়াম ফাউন্ডেশনের উল্টোদিকে রাস্তার ওপাশেই আমাদের বাড়ি।
- অ। তাহলেতো ভালোই হলো। কক্সবাজারে আমার এই প্রথম আসা। বিয়াম ফাউন্ডেশনের এক্জাক্ট লোকেশনটাও আমার অজানা। আপনাকে পেয়ে ভালোই হলো। ঢাকায় কী করেন? পড়াশুনা?
- নাহ্! পরীক্ষা দিতে গিয়েছিলাম। চাকুরীর পরীক্ষা। আমি কক্সবাজার থেকেই পড়াশুনা করেছি।
- তাই? আমিও কালকে পরীক্ষা দিয়ে তারপার আজকে একা একা রওনা দিলাম। আমার কলিগরা আসলে গতকালকেই এখানে এসে পৌঁছেছে।
- ও। চাকুরী করেন তো?
- করি। আবার পরীক্ষাও দেই। বয়স আছে তাই দিচ্ছি আর কি!
- হুম। আপনাদের জন্য আমাদের চাকুরী হচ্ছে না। একটি চাকুরী করছেন। তবু এসব পরীক্ষায় এটেন্ট করে আমাদের কপাল পুড়ছেন। অথচ একটা চাকুরী আমার খুব দরকার।
আমি নিশ্চুপ হয়ে গেলাম। এই আশ্চর্য সুন্দর সমুদ্রকন্যা মেয়েটার শেষ লাইনটিতে একটি বিষাদ মাখানো ছুড়ির ফলা ছিল যেন। ছুড়িটা আমাকে বিদ্ধ করলো। আমি আহত হলাম।
চাকুরীটা তার খুব দরকার। কিন্তু কেন খুব দরকার সে কথাটা তাকে আমি জিজ্ঞেস করতে পারিনা। অযাচিত অভদ্রতা হয়ে যায়। হয়তো ঘরে অসুস্থ্য বৃদ্ধ বাবা মা। ছোট ভাইবোনগুলোর পড়াশুনার খরচ চালাতে পারছেন না। মাস শেষে সংসার আর চলে না প্রায়। কিংবা হয়তো বাব-মা বিয়ে দিয়ে দিতে চাচ্ছে তাকে। কিন্তু আশৈশব মন প্রাণ উজাড় করে দিয়ে ভালোবাসার মানুষটা এখনো চাকরি পায়নি। মেয়েটার একটা চাকরি হলেই হয়তো দু’জনের সাদায় কালোয় জঞ্জালে ভরা লাল-নীল রঙ্গীন সংসারের স্বপ্ন। এসব ভাবতে ভাবতেই নিশ্চুপ ছিলাম কতক্ষণ খেয়াল নেই। সম্বিত ফিরে পেলাম ওর কথায়-
- আপনি ঘুমোতে পারেন। আমার কোনো প্রবলেম নেই। আমি লক্ষ্য করেছি। ঘুমের ঘোরে আমার কাঁধে একটু হেলান দিয়েছিলেন বলেই হয়তো আর বসতেছিলেন না সিটে। আই হ্যাভ নো প্রবলেম। যদি আপনার সমস্যা হয় খুব, আপনি ঘুমাতে পারেন।
আমি অস্বস্তির একটা হাসি দিলাম। সব সুন্দরী মেয়েই যে বোকা হয় আর বেশি কথা বলে তা নয়। কিছু কিছু মেয়ে আশ্চর্য নম্রতা, ভদ্রতা এবং বুদ্ধিমত্তায় এমন আবিষ্ট করে ফেলে যে বুকের ভিতর কোথায় যেন একটু যেন ব্যথা হয়। সুখের মতো ব্যথা। আমি হাসলাম। হাসিটা কী একটু বোকা বোকা হয়ে গেলো!
The End
Credit By : Avraw Arif
0 মন্তব্যসমূহ