মনোবিজ্ঞানঃ পার্টঃ ০১

মনোবিজ্ঞানঃ নিজের সম্পর্কে আমরা কতটা জানি ?

 পার্টঃ ০১


আমরা প্রতিদিন অনেক ধরণের কাজ করি। চেতন কিংবা অবচেতন মনে আমরা অনেক কাজ করে ফেলি কিংবা করতে পছন্দ করি। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আমরা কিন্তু জানিনা এই কাজগুলো আমরা কেন করি! 'নিজেকে জানো' মতবাদ নিয়ে সক্রেটিস বেশ মুক্ত আলোচনা করেছিলেন। সারাজীবন তিনি ব্যয় করেছেন এই নিজেকে জানার মধ্যে। যদিও নিজেকে জানার জন্য সক্রেটিসের "নিজেকে জানো" পন্থাটি যথেষ্ট ছিলো, তবুও সত্যিকার অর্থে আমরা নিজের সম্পর্কে খুবই কম জানি। বেশ চাঞ্চল্যকর হলেও সত্যি যে, আমরা নিজের সম্পর্কে যা জানি, অন্যের সম্পর্কে তার চেয়েও বেশি জানি। অন্যের ভালো, খারাপ, প্রশংসা, নিন্দাসহ বেশ কিছু উপর্সগ কিংবা অনুসর্গ আমরা ধরতে পারলেও নিজের সম্পর্কে আমরা আসলে অনেক কিছুই জানিনা।

মনোবিজ্ঞান নিয়ে বিজ্ঞানীরা দীর্ঘদিন ধরে আমরা কীভাবে পৃথিবীকে উপলব্ধি করি এবং আমাদের আচরণকে কে নিয়ন্ত্রণ করি তার উত্তর জানার চেষ্টা করে আসছেন। বিজ্ঞানের এই পর্যায়ে এসে তারা বেশ সফল হয়েছেন এবং মানুষের মনস্তাত্ত্বিক অনেক কাজের কারণ তারা উদঘাটন করতে সক্ষম হয়েছেন।
আজকের আলোচনায় আমরা বেশ কয়েকটি হিউম্যান বিহ্যাভিয়ার কিংবা মানুষের সাধারণ কয়েকটি প্রবৃত্তি নিয়ে আলোচনা করবো। যা সচরাচর আমরা করে থাকি। তা হতে পারে চেতনে কিংবা অবচেতনে!

আমাদের সবার মন্দ কিছু ক্ষমতা আছে।

We all have some evil capacity

 

শুনতে অবাক লাগলেও এটাই সত্যি। হ্যাঁ, আমাদের সবারই মন্দ কাজ করার এক অদ্ভুত ক্ষমতা আছে এবং সুযোগ পেলেই আমরা মন্দ কাজ করতে বেশ পছন্দ করি। আপনি হয়তো আশেপাশের জীবন থেকে এই বিষয়ে বিস্তারিত ধারণা অনেক আগেই পেয়ে গিয়েছেন। জীবনের এই চলার পথে আমাদের এই অভিজ্ঞতাগুলো বেশ তিক্ত এবং অবিশ্বাস্য ও বটে! তাহলে আসুন জেনে নিই এই বিষয়ে একটি গবেষণার সারমর্ম।

মনোবিজ্ঞান এর ইতিহাসে সবচেয়ে বিখ্যাত পরীক্ষা ছিলো এটি। সাল ১৯৭১। সামাজিক অবস্থা কীভাবে মানুষের আচরণকে প্রভাবিত করতে পারে তার উপর একটি মনোবিজ্ঞান গবেষণা করতে দেয়া হয়েছিল স্ট্যানফোর্ড কারাগারকে। নেতৃত্বে  ছিলেন মনস্তাত্ত্বিক ফিলিপ জিম্বার্ডো্ (Philip Zimbardo)। গবেষকরা এক হয়েছিলেন স্ট্যানফোর্ড সাই বিল্ডিং এর বেসমেন্টে। সেখানে একটি জাল জেল তৈরি ছিল। অর্থাৎ জেলের মতো দেখতে হলেও সেটি জেল ছিলো না। নকল সেই জেলে বন্দী এবং রক্ষীবাহিনী হিসাবে কাজ করার জন্য ২৪ জন স্নাতকোত্তর ভলান্টিয়ার কে বেছে নেয়া হয়েছিলো। তাদের পূর্বে কোন আপরাধ-ধর্মী কাজের রেকর্ড ছিল না এবং তারা মানসিকভাবে সম্পূর্ণ সুস্থ ছিল।

গবেষকরা লুকানো ক্যামেরা ব্যবহার করে বন্দীদের ( যাদের ২৪ ঘন্টাই জেলে কাটাতে হয়) এবং গার্ড (যারা আট ঘণ্টা করে সময় ভাগাভাগি করে) পর্যবেক্ষণ করে। যে এক্সপেরিমেন্টটি দুই সপ্তাহ ধরে হবার কথা ছিলো, তা ৬ দিনের মাথায় স্থগিত করা হয়। আসলে করা হয় বললে ভুল হবে। কর্তৃপক্ষ স্থগিত করতে বাধ্য হয়। রক্ষীদের তীব্র কঠোর আচরণ এবং অনেক সময় তারা বন্দীদের উপর জঘণ্য মানসিক অত্যাচার চালাতো  জিম্বার্ডো বলেন,

"রক্ষীরা বন্দীদের বিরুদ্ধে তাদের আগ্রাসন বর্ধিত করে, তাদের উলঙ্গ করে, তাদের মাথার উপর ব্যাগ রাখে এবং পরিশেষে তাদেরকে যৌন নিপীড়নের শিকারে পরিণত করে"। ছয় দিন পরে আমাকে এটা শেষ করতেই হতো কারণ এটি নিয়ন্ত্রণের বাইরে ছিল - আমি রাতে ঘুমাতেও পারিনি এই দুশ্চিন্তায় যে রক্ষীরা না জানি বন্দীদের কি করে বসে।"

 শুধুমাত্র বন্দী হবার অপরাধে কয়েকটি নিরপরাধ মানুষকে পেতে হয়েছিলো নির্মম সাজা। অন্যদিকে নিরপরাধ জেনেও রক্ষীরা মানসিক কিংবা দায়িত্বজনিত কারণে হোক তাদেরকে নিপীড়িত করেছে। এটাই আসলে মানুষের একটি অন্যতম সাধারণ প্রবৃত্তি। আমরা সুযোগে অন্যায় করতে দ্বিধাবোধ করি না। আর একেই বলে মানুষের সাধারণ মন্দ হবার কিংবা নষ্ট হবার অদ্ভুত ক্ষমতা। হয়তো এই কারণেই কবি বলেছেন, "নষ্ট হবো, হবে!"

চলবে  ...... 

Credit By :  Biggan Bangla



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

বেশি বার পড়া হয়েছে

একজন রিক্সা-ওয়ালা