মনোবিজ্ঞানঃ পার্টঃ ০২

মনোবিজ্ঞানঃ নিজের সম্পর্কে আমরা কতটা জানি! 

পার্টঃ ০২ 


প্রথম পর্বের পর থেকে: 

  • আমরা আশেপাশের পরিবেশ পর্যবেক্ষণ করিনা!

হুমায়ূন আহমেদের কালজয়ী চরিত্র হিমু একদিন কোট-টাই-স্যুটের সাথে স্যান্ডেল পরে ঢাকার রাস্তায় বের হয়েছিলো। সে অবাক হয়ে লক্ষ্য করেছিলো ১ কোটি মানুষের বসবাসের শহর ঢাকাতে একটি শিশু ছাড়া আর কেউ তার দিকে সেভাবে তাকাচ্ছেই না! ব্যাপারটি উপন্যাসে হলেও আসলে সত্যি। আমাদের একটা সাধারণ প্রবৃত্তি হচ্ছে আমরা আমাদের আশেপাশের পরিবেশ কে ভালভাবে অবজার্ভ কিংবা পর্যবেক্ষণ করি না। আপনি কি জানেন আপনার চারপাশে কি ঘটছে? আপনি নিজেও জানেন না আপনি আপনার আশেপাশে মানে চারপাশের সম্পর্কে কতটা কম খোঁজখবর রাখেন!

We don't notice our surrounding.


১৯৯৮ সালে  হার্ভার্ড এবং কেন্ট স্টেট ইউনিভার্সিটির গবেষকগণ একটি কলেজ ক্যাম্পাসে পথচারীদেরকে  নিয়ে একটি মনোবিজ্ঞান পরীক্ষা করলেন। পরীক্ষাটির উদ্দেশ্য ছিল তাদের মধ্যে কতজন মানুষ আশেপাশের পরিবেশের দিকে লক্ষ করে।
পরীক্ষায়, একজন অভিনেতাকে গবেষকগন তাদের গবেষণা কাজে ব্যবহার করেছিলেন। এক্সপেরিমেন্টের সময় সেই অভিনেতা পথচারীর কাছে গিয়েছিলেন এবং কোন একটা পথের খোঁজ করছিলেন। যখন পথচারীরা সেই পথের নির্দেশনা দিচ্ছিলো, ঠিক সেই সময় দুইজন লোক ঐ অভিনেতা এবং পথচারীর মধ্যে একটি বড় কাঠের দরজা নিয়ে চলে গেলেন এবং যার কারণে  কয়েক সেকেন্ডের জন্য অভিনেতা এবং পথচারী একে অপরকে দেখতে পায়নি। এবং এই সময়ের মধ্যে আগের অভিনেতাকে সরিয়ে সেখানে একই উচ্চতা এবং স্বাস্থ্যগত মিল আছে এমন অন্য একজন অভিনেতাকে দাঁড় করিয়ে দেয়া হয়। অবাক ব্যাপার হচ্ছে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে অর্ধেকেরও বেশী এই পরবর্তন লক্ষ্য করেননি!

এই এক্সপেরিমেন্টটি "Change blindness" ঘটনাটি ব্যাখ্যা করে, যা দেখায় যে আমরা যে কোনো প্রদত্ত দৃশ্যের দৃশ্য থেকে কীভাবে গ্রহণ করি। এবং এই ঘটনা নিশ্চিত করে যে, আমরা মেমোরি এবং চিন্তার চেয়েও প্যাটার্ন এর উপর অনেক বেশি নির্ভর করি । যার কারণে অর্ধেকের বেশি পথচারীই অভিনেতাদের মধ্যে কোন পার্থক্য খুঁজে পায়নি। 
  • যারা ভালো কিছুর জন্য ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করতে পারে, তারাই পরবর্তীতে বেশি সফল হয়! 

এটি অনেকটা "সবুরে মেওয়া ফলে" টাইপের। অর্থাৎ আপনি যত বেশি অপেক্ষা করবেন, অন্যদের তুলনায় ততবেশি সফল হবেন। ব্যাপারটি আবার লোভের দিক থেকেও ব্যাখ্যা করা যায়। আপনি যদি আপনার লোভ দমন করতে পারেন, তবে নিশ্চিত থাকেন ভবিষৎ আপনার জন্য বিশেষ পুরষ্কার নিয়ে অপেক্ষা করছে।

1960-এর দশকের শেষের দিকে  স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি পরীক্ষায় তাৎক্ষনিক সন্তুষ্টির প্রলোভন রোধ করার একটি মনোবিজ্ঞান পরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষায় এমন শিশুদের নির্বাচন করা হয়েছিলো যারা এখনো স্কুলে ভর্তি হয়নি। সেই এক্সপেরিমেন্টটি শিশুদের প্রলোভন(লোভ) ক্ষমতা পরীক্ষা করে। এবং তাদের আত্ন-নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা ও স্ব-শৃঙ্খলা (Self Descipline) সম্পর্কেও ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।
পরীক্ষায় চার বছর বয়সী ছেলেমেয়েদের সামনে একটি প্লেটের উপর অনেক মাশরুম দিয়ে রাখা হয়েছিল এবং বলা হয়েছিল যে, তারা এখন এই মাশরুমগুলো খেয়ে ফেলতে পারে অথবা গবেষকরা ১৫  মিনিট পরে ফিরে আসার আগ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে পারে। যদি অপেক্ষা করতে পারে তাহলে পুরষ্কারের ব্যবস্থাও ছিলো। কেননা গবেষকরা ফিরে এসে তাদের অতিরিক্ত আরো দুইটি মাশরুম দিবে।

Delaying gratification is hard!

 টাইমের রিপোর্ট অনুযায়ী যদিও বেশিরভাগ শিশু বলেছিল যে তারা অপেক্ষা করবে। তারা প্রায় সবাই তাদের লোভকে দমন করার জন্য চেষ্টা করে। কিন্তু শেষপর্যন্ত না পেরে গবেষকদল ফিরে আসার পূর্বেই অনেকে মাশরুম খেয়ে ফেলে। যেসব শিশুরা ১৫ মিনিট তাদের লোভকে দমন করতে পেরেছিলো তারা কিছু কৌশল অবলম্বন করেছিল। যেমন, চোখ বন্ধ করে, কিংবা উল্টা ঘুরে বসে থেকে।
এক্সপেরিমেন্টের দীর্ঘমেয়াদী ফলাফল বেশ আশ্চর্যজনক ছিলো। পরবর্তীতে সেসব শিশু যারা অপেক্ষা করে ছিল তাদের মাঝে নিচের বৈশিষ্ট্যগুলো পাওয়া গিয়েছিলঃ
  • তাদের আচরণগত সমস্যা, মাদকদ্রব্যে আকৃষ্ট হওয়ার প্রবণতা এবং স্থূলতা এসব অন্যদের তুলনায় অনেকাংশে কম ছিল। 
  • এবং তারা পরবর্তীতে জীবনে অন্যরা যারা শেষ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে পারেনি তাদের তুলনায় সফল ছিল।
অর্থাৎ আপনি যদি অপেক্ষা করেন কিংবা সবুর করেন, তবে আপনার জীবনে মেওয়া ফলবেই!



চলবে...

Credit By : Biggan Bangla

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

বেশি বার পড়া হয়েছে

একজন রিক্সা-ওয়ালা