মঞ্জুরি
লেখক ঃ লিঙ্কন হাসান
গ্রামের চাচাতো বোন বেড়াতে এসেছে । একা আসে নি । চাচা-চাচিও এসেছেন। চাচাতো বোন শহর ঘুরে দেখতে চায় । আর সেই ঝামেলাপূর্ণ দায়িত্বটা এসে পড়েছে আমার উপর ।
তার নাম মঞ্জুরি । বিকেলে সবার তাগিদের ঠেলায় ঘুরতে বের হলাম । ভাবলাম শিশু পার্ক থেকে ঘুরিয়ে নিয়ে আসি । পার্কটা বাসার পাশেই । হেটে গেলে ৫ মিনিট লাগে । যাওয়ার পথে , ফুটপাতে একটা জুতোর ভ্যান পাওয়া গেলো । মঞ্জুরি আবদার করেছে তাকে জুতো কিনে দিতে হবে । কি আর করার , দিলাম কিনে । তবে সমস্যা একটা হয়েছে । সে একটু পরপর জুতোজোড়া ব্যাগ থেকে বের করে নাকের কাছে নিয়ে ঘষছে । তার নাকি নতুন জুতোর গন্ধ অনেক ভালো লাগে । এজন্যই নাকি কিনেছে । আশেপাশের মানুষজন হা করে তাকিয়ে মঞ্জুরির কাণ্ড দেখছে । হাটতে হাটতে বললাম , “মঞ্জুরি ?”
“জ্বে ভাইজান, কন ।”
“এই রাস্তার মধ্যে জুতোর গন্ধ শুঁকতে হবে না । বাসায় গিয়ে মনভরে শুঁকবা , কেমন ?”
“মনডা যে মানে না ভাইজান । ইচ্ছা করে হারাক্ষণ নয়া জুতাডা নাকের মইধ্যে ঠাইস্যা ধইরা রাহি ।”
পার্কে এসে আরেক বিপদে পড়লাম । ছোট বাচ্চাকাচ্চাদের ঘোড়ায় চড়ার একরকম দোলনা আছে । মঞ্জুরি এই দোলনাতে উঠতে চায় । কিন্তু দোলনা কর্তৃপক্ষ কোনোমতেই বড়োদের উঠতে দেবে না । মঞ্জুরিও নাছোড়বান্দা । দোলনাতে না উঠে সে কোথাও যাবে না । অবশেষে তিন ডাবল টাকা বেশি দিয়ে কর্তৃপক্ষকে রাজি করাতে পেরেছি । তার আবদার অনুযায়ী আমাকেও দোলনায় উঠতে হয়েছে ।
মঞ্জুরি আমার পিটের ধুলো ঝেড়ে দিচ্ছে আর বলছে , “ভাইজান , আফনে কেমতে দোলনা ছিঁইড়া পইড়া গেলাইন ? আহারে ভাইজান , আফনের গুঞ্জিও তো এট্টু ছিঁইড়া গেলো দেহি ।”
আমি জরিমানা গুনে পার্ক থেকে বেরিয়ে আসলাম । মঞ্জুরি পেছন পেছন আসছে আর ভাইজান ভাইজান বলে ডাকছে । আমি ধমকের সুরে বললাম , “হপ, মূর্খ মেয়ে । চুপচাপ আসো , একদম কথা বলবা না ।”
সে চুপচাপ বাধ্য মেয়ের মতো হাটছে আর জুতোর গন্ধ শুঁকছে । কিছুক্ষণ পর আস্তে আস্তে বললো , “ভাইজান? ও ভাইজান ?”
আমি তার দিকে ফিরে তাকালাম । কি নিষ্পাপ চাহনি । মঞ্জুরির ভয়পাওয়া চেহারাটা দেখে রাগটা ঝট করেই কমে গেলো । খানিক হেসে উত্তর দিলাম , “কি বলবি , বল ।”
“এট্টু আগে যে মূখ্য মাইয়া কইয়া ধমক দিলেন , মুই কিন্তু মুখ্য না । কেলাস টেনে পড়িছি ।”
“তাই নাকি ? তাহলে মঞ্জুরি বানান করো তো ?”
অনেকক্ষণ চেষ্টা করলো । কোনোভাবেই নিজের নাম বানান করতে পারছে না । শেষে হাল ছেড়ে দিয়ে বললো , “ভাইজান , পারুম না । পড়ালেহা ভুইল্যা গেছি । এট্টু শিখাই দেন দেহি ।”
আমিও মনে মনে চেষ্টা করলাম অনেকক্ষণ । উপায় না পেয়ে বললাম , “বাসায় গিয়ে শেখাবো , ঠিকাছে ? রাস্তার মধ্যে শিখলে বেশিক্ষণ মনে থাকবে না ।”
মঞ্জুরি জুতো শুঁকতে শুঁকতে মাথা নেড়ে হ্যাঁ-সূচক সম্মতি জানালো ।
যদিও আমি ব্যক্তিগত ভাবে ফুচকা পছন্দ করি না , তবুও সন্ধ্যায় মঞ্জুরিকে নিয়ে ফুচকা খেতে বসলাম । ভেবেছিলাম , মঞ্জুরি খুশি হবে । কিন্তু সে ফুচকা খেয়ে খুশি তো হলোই না , উল্টো ফুচকাওয়ালাকে কিছু ভাষণ দিয়ে এলো , “এই যে দোকানদার সাব , কিয়ের খাওন এইগুলা ? আলুভত্তা দিয়া রাহিছেন হুদাই । বিভিন্ন ভত্তা রাইখবেন । সব মাইনষে আলুভত্তা ফছন্দ করে না । মোর লাইগা মাছ ভত্তা অইলে সুবিধে অইতো ।”
ফুচকাওয়ালা আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে । আমি উনাকে কানেকানে বললাম , “মামা, কিছু মনে করবেন না । এই মেয়ে পাগল ।”
আজকের মতো ঘুরাঘুরি এখানেই শেষ । বাসায় ফিরলাম
। সবার কাছেই নালিশ করলাম মঞ্জুরি কি কি কাণ্ড ঘটিয়েছে
। সবচেয়ে গুরুত্ব সহকারে বললাম রাস্তায় হেটে হেটে জুতোর গন্ধ শুঁকার কাহিনীটা
। এই কাহিনীটা শুনার পরপরই চাচি ঝটপট উঠে চলে গেলো । আমিও কিছুক্ষণ পর উঁকি দিলাম চাচির রুমে , তিনিও জানালার পাশে বসে আপনমনে জুতোর গন্ধ শুঁকছে।
The End
Writer Name : Linkon Hasan
Places He's Lived =>
CURRENT CITY AND HOME TOWN
Current city
Home Town
· Nationality: Bangladeshi (By Birth)
0 মন্তব্যসমূহ