পরীক্ষার হলে একদিন
পরীক্ষার হলে সবাই মাথা
নিচু করে এমনভাবে লিখছে
মনে হচ্ছে যেন সাতটা সৃজনশীলের
জায়গায় দশটা সৃজনশীলই লিখে
ফেলবে। অথচ এরাই যখন আবার
হল থেকে বের, হয়
মনে হয় যেন সাদা
খাতা জমা দিয়ে এসেছে।
বেরিয়েই বলতে শুরু করে,
'আরে দোস্ত কিচ্ছু
কমন পড়ে নাই পাশ করব
কিনা আল্লাই জানে'
তখন খুব করে
জানতে ইচ্ছে করে..
'হারামজাদারা কিছুই যখন কমন পড়ে
নাই
তাহলে তিন চারটা করে
লুজ নিয়ে কি বাপ
দাদা চৌদ্দগুষ্টির নাম লিখে আসছিশ...😈😈😈
তবে আমি বাপু সহজ
সরল মানুষ। এত মারপ্যাঁচ বুঝিনা। পেছনে থাকা রেহান যা
লেখে তা-ই কপি
করে দিয়ে আসি। আর কোনোদিন
স্যারের কাছে ধরাও খাইনি।
তাই প্রতিদিন এত কষ্ট করে
মাথা ঘামিয়ে পড়া লেখা করতে
যাইনা। কারন আমি জানি আমার
জন্য রেহান পড়ছে। তাহলে শুধু শুধু কেন
এত কষ্ট করতে যাব।
আমি বাপু আবার সহজ সরল
মানুষ। এত মারপ্যাঁচ বুঝিনা।
এই নিয়ে এগারোটা
পরীক্ষা হয়ে গেলো। রেহানেরটা
কপি করে করে বেশ
ভালোই পরীক্ষা দিচ্ছিলাম। বিপত্তিটা বাঁধল আজ শেষ পরীক্ষার
দিন। আজ হল গার্ড পড়েছেন
মাসুদ স্যার। খুবই স্ট্রিক্ট টিচার।
উনি হলে থাকা মানে
দু চারটে খাতা তো যাবেই।
হলে সবাই যখন শেষ পরীক্ষা
বলে মজ মাস্তি করছিল
তখন হলে উনার আগমনে
সবার আনন্দ ফিকে হয়ে গেল।
সবার মনে শুধু একটাই চিন্তা।
ভালোয় ভালোয় পরীক্ষাটা কেটে গেলে বাঁচি।
আর প্রশ্ন হাতে পাওয়ার পর
সবাই যখন সব পারি
ভাব নিয়ে লিখতে শুরু
করল আমি তখন পড়েছি
মহা বিপাকে। একটু ঘাড় ঘুরাতে গেলেই
হাঁক ছেড়ে ডেকে উঠেন
স্যার। আমি যতবারই আড় চোখে স্যারের
দিকে তাকাই। ততবারই দেখি স্যার আমার
দিকে গোল গোল চশমার
ফাঁক দিয়ে বাজ পাখির
মত তাকিয়ে আছেন...😞
স্যারেরা কি চেহারা দেখলেই
বুঝে যায় কোন ছাত্রটা
কেমন? কে জানে? তবে
আমি পড়লাম বেশ চিন্তায়....😒 শেষকালে এসে
কি সাদা খাতা জমা
দিয়ে বাড়ি ফিরতে হবে
তবে...😳
- কিন্তু না।
স্যারও হয়ত আমার প্রব্লেমটা
বুঝতে পারলেন। তাইতো একটু পড়েই হঠাৎ
হল থেকে বেরিয়ে গেলেন।
আমি বাপু সহজ সরল
ছেলে। এত মারপ্যাঁচ বুঝিনা।
স্যার বেরিয়ে যেতেই বাঁ দিকে বাকা
হয়ে পেছনে রেহানের খাতা দেখে দেখে
ধুমসে লেখা শুরু....😜😜😜
যাক সাদা খাতা জমা
দিতে হবেনা অন্তত। নতুবা আজ মান সম্মান
সব যেত। তো দু মিনিট পড়েই
আড় চোখে পিছে তাকিয়ে
দেখি রেহানের খাতা দেখা যাচ্ছেনা।
ফিসফিসিয়ে বললাম...
- এই রেহান খাতাটা
একটু সামনে আন দেখতে পারছিনা।
রেহানের কোন উত্তর নেই।
আবার বললাম...
- এই রেহানের বাচ্চা খাতাটা সামনে আন।
দেখতে পারছি না কিছু।
এবারো রেহানের কোনো জবাব না
পেয়ে তেলে বেগুনে জলে
উঠলাম। ধপাস করে মাথা ঘুরিয়ে
পিছে তাকাতেই তব্দা খেলাম।
এতো মাসুদ স্যার!
রেহানের জায়গায় আমার দিকে তাকিয়ে
গালে হাত দিয়ে বসে
আছেন। পাশে বসে রেহান একবার
আমার দিকে আরেকবার স্যারের
দিকে ভ্যাবলার মত তাকাচ্ছে।
আমাকে তব্দা খেতে দেখেই স্যার
বলে উঠলেন......
- দেহো ভাতিজা দেহো।
দেহোনা কেরে......?
আমি বাপু সহজ
সরল মানুষ। এত মারপ্যাঁচ বুঝিনা।
স্যার দেখতে বলার সাথে সাথে
স্যারকে সম্মানের সহিত ধন্যবাদ জানিয়ে
রেহানকে বললাম.....
- ওই স্যার পারমিশন
দিয়া দিসে। এবার তো বিন্দাস দেখতে
পারমু...🙋 খাতা এদিকে নিয়ায়।
কথাটা শেষ করার সাথে সাথে
স্যার তার বাঘের মত
বড় থাবা আমার গালে
বসিয়ে দিলেন। দু সেকেন্ড সময় লাগল এটুকু
বুঝতে যে এটা থাবা
না চড় ছিল। তারপর স্যার
আমার কানটা ধরে হলের সামনে
নিয়ে স্যারের টেবিলের বাঁ পাশে বসালো।
আর আমাকে চ্যালেঞ্জ করল 'তুই আজকে
আমার সামনে বসে পরীক্ষা দিবি।
দেখব ক্যামনে দেখোস।
আমি বাপু সহজ
সরল মানুষ। এত মারপ্যাঁচ বুঝিনা।
তাই আশপাশে তাকিয়ে
স্যারের চ্যালেঞ্জ গ্রহন করে নিলাম। স্যার এত
জোরে কানটা ধরে টেনেছে যে
বাম হাত দিয়ে কানটা
চেপে ধরে মাথাটা বাঁ
দিকে কাঁত করে লিখতে
শুরু করলাম। প্রায় দেড় ঘন্টা স্যার
আমার দিকে বাজ পাখির
ন্যায় তাকিয়ে থাকল। আর আমিও বাম হাতটা
কানের নিচে দিয়ে লিখতে
থাকলাম।
একটু পরেই আমাদের ক্লাসের
ফার্স্টবয় খাতা জমা দিয়ে
চলে গেল। আমি আর বসে থাকি
কেন?
আমিও স্যারকে খাতা
জমা দিয়ে দিলাম। স্যার
কিছুটা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস
করল...
- তোর লেখা শেষ!
আমি উপরের পাটির
সবগুলো দাঁত বের করে
হাসি দিয়ে স্যারকে বললাম...
- জ্বি স্যার।
- সব লিখেছিস?
- জ্বি স্যার।
- দেখি কি লিখেছিস।
স্যার আমার খাতা উল্টিয়ে
দেখতে লাগল আর আমি
হল থেকে বেরিয়ে চলে
এলাম।
একটু পরেই পিছন
থেকে মাসুদ স্যার ডাক দিলেন। আমি স্যারের
কাছে গিয়ে সসম্মানে বললাম...
-কিছু বলবেন স্যার?
- তুই তো কিছুই পড়ে
আসিস নি।
তবে সব গুলোর আনসার
কিভাবে লিখলি?
সত্যি করে বল তুই
নকল করেছিস?
- কি যে বলেন
স্যার।
আপনি তো পুরো সময়টাই
আমার দিকে তাকিয়ে ছিলেন।
আপনার সামনে বসেই তো পরীক্ষা
দিলাম।
নকল করলে কি
আপনি দেখতেন না....😏😏😏
- তাহলে তুই সবগুলো আনসার
কিভাবে করলি! সত্যি করে বল। নাহলে আমার
আজ ঘুম হবেনা।
আমি একটু কেশে
নিয়ে শ্রদ্ধার সাথে বললাম.....
- স্যার আমি সহজ সরল
মানুষ। এত মারপ্যাঁচ বুঝিনা।
তবে ছাত্র হয়ে
আপনাকে একটা উপদেশ দেই।
পরেরবার যখন কাউকে পানিশমেন্ট দেয়ার জন্য আপনার সামনে
এনে বসাবেন তখন খেয়াল রাখবেন
তার ডান পাশে যেন
ফার্স্টবয় না থাকে।
আর সে যেন
বাম হাত কানের নিচে
দিয়ে ডান পাশে থাকা
ফার্স্টবয়ের খাতা থেকে সব
কপি করতে না পারে।
অন্যথায় আপনার সাজা তার কাছে
মজায় পরিণত হয়ে যাবে।
স্যার,
কোথায় আছে শেষ ভালো
যার সব ভালো তার।
আপনার কল্যাণে আমার শেষ পরীক্ষাটা
সব থেকে ভালো হয়েছে।
আপনার এই ঋণ আমি কোনোদিন
ভুলব না....😜😜
ধন্যবাদ স্যার।
কথাগুলো বলে আমি পিছন
ঘুরে চলে এলাম। স্যার এখনো
তব্দা খেয়ে ঐ জায়গাতেই
দাঁড়িয়ে আছে। বেচারা এমন শক হয়ত
আর কখনো খায়নি।
আমি বাপু সহজ
সরল মানুষ। এত মারপ্যাঁচ বুঝিনা হুম।
0 মন্তব্যসমূহ