সায়েন্স ফিকশন: নি:সঙ্গ অভিযাত্রী (৩য় পর্ব)

 নি:সঙ্গ অভিযাত্রী

(৩য় পর্ব)

.................................................
সচেতন অবস্থায় মানুষ তার নিউরণে যে পরিমাণ স্মৃতি রাখে তাই সেন্ট্রাল কো-ইনফরমেশান মডিউলে রাখা হয়। এই জিনিসটি করা হয় মানুষের নার্ভাস সিস্টেমের কার্যনীতির উপর।সচেতন অবস্হায় মানুষ তার নিউরণে যে পরিমান স্মৃতি রাখে তা ই সেন্ট্রাল কো-ইনফরমেশান মডিউলে রাখা হয়।কিন্তু অচেতন অথবা ঘুমন্ত অবস্থায় নার্ভাস সিস্টেম অনেকটা শিথিল অবস্হায় থাকে।

তাই এই সময়ের স্মৃতির রিকভার এখনও সম্ভব হয়নি। অনেকেই এটা নিয়ে গবেষণা করছেন। কিন্তু রামিনের নিজের উপর খুব রাগ লাগছে ভালবাসার একটা ঘটনাও কেন সে মনে রাখতে পারেনা। নিজেকে একটা অপদার্থ মনে হতে থাকে।


হঠাৎ ই আবার রাকার গলা শুনতে পায় রামিন। রাকা বলতে থাকে, “রামিন আমি গবেষণার জন্যে প্রধান বিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্রে সুযোগ পেয়েছি”। রামিন বুঝতে পারে রাকার আসল উচ্ছ্বাস প্রধান বিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্রে গবেষণার সুযোগ পাওয়ার জন্যে নয়। রাকার আসল উচ্ছ্বাস এখন থেকে রাকা রামিন যেখানে কাজ করে সেখানে থাকতে পারবে,অনেক কাছাকাছি থাকতে পারবে রামিনের এই জন্যেই। সৌজন্যতার জন্য তবুও নিস্পৃহ গলায় জিজ্ঞেস করে, “কিসের গবেষনা”? রামিনের ভাবলেশহীন জবাবেও রাকার উচ্ছ্বাসে এতটুকু ভাটা পড়েনা। সে বলতে থাকে, “আমরা জেনেটিক মিউটেশানের মাধ্যমে একটা ট্রান্সজেনিক অ্যানিমেল বানিয়েছিলাম যে যেটা প্রচুর পরিমাণে হিট শুষে নিতে পারে। তোমাদের বিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্রের নতুন প্রধান ইমি প্রিনিস আমাদের এই প্রোজেক্টটাকে অনেক পছন্দ এবং গুরুত্বপূর্ণ মনে করছেন পৃথিবীর গ্লোবাল ওয়ার্মিং নিয়ন্ত্রণে।”

উফ্ আবার সেই সাইবর্গ। রামিন চুপ করে থাকে এবং পরে কথা বলবে বলে সেন্সর বন্ধ করে দেয়। রাকার অনেক কষ্ট হতে থাকে। সে ভেবেছিল রামিন একটু হলেও খুশি হবে। সামনে যতই নিস্পৃহ ভাব দেখাক, মনে মনে ঠিকই পছন্দ করে সে রাকাকে। কিন্তু রাকার হঠাৎ মনে হয় রামিন তাকে একটুও পছন্দ করেনা তাই এভাবে এড়িয়ে চলে।  ভাবতেই বুকের ভিতরটা টুকরো টুকরো হয়ে যেতে থাকে। কষ্টে রামিন কে গালি দিতে ইচ্ছে করে। রাকা অনেক খুশি হয়েছিল এই সুযোগটা পেয়ে রামিনের আশেপাশে থাকা যাবে এটা ভেবে।

হঠাৎ বুক ফেটে কান্না আসতে থাকে।ইচ্ছে করে,রামিন কে গলিয়ে সুপার গ্লু বানিয়ে একটা টিউবে ভরে রাখতে। তাহলে এরপর থেকে যখন ই ওর কারনে বুক ভেঙ্গে যাবে তখন ওকে দিয়ে বানানো সুপার গ্লু দিয়ে জোড়া লাগানো যাবে।এসব ভাবতে ভাবতেই রামিনের উপর থেকে সব রাগ চলে যায়।

সায়েন্স ফিকশন

আপন মনে হাসতে হাসতেই বলতে থাকে, “আমাকে তোমার ভালবাসতে হবেনা রামিন। আমি তোমাকে এত বেশি ভালবাসি যে আমার একার ভালবাসাতেই আমাদের দুজনের জীবন কেটে যাবে।”
ইমি প্রিনিস মোটামুটি সবকিছুই ভালভাবে চালাচ্ছে। তবুও তাকে কেন যেন একদমই সহ্য করতে পারছেনা রামিন। তবুও সে সব ভুলে তার কাজে মনোযোগ দেওয়ার চেষ্টা করে। মানুষের ঘুমন্ত অথবা অচেতন অবস্থার স্বপ্ন কিংবা দুর্বল স্মৃতিগুলোকে নিউরণ থেকে উদ্ধার করে কিভাবে সেন্ট্রাল কো-ইনফরমেশান মডিউলে ট্রান্সফার করা যায় এটা নিয়ে সে গবেষণা করছে।

কিন্তু এই সময়টাতে নার্ভাস সিস্টেম এতো বেশি শিথিল হয়ে থাকে যে, নিউরণ থাকে কোনও সিগন্যাল পাওয়া যায়না তেমন। মাঝে মাঝে একটু পেলেও সেটা ট্রান্সমিটারে পাস করার আগেই নষ্ট হয়ে যায়। রামিন চেষ্টা করছে সিগন্যালগুলোকে কোনোভাবে মডুলেটেড করে ট্রান্সমিট করা যায় কিনা। কিন্তু পিকোটেকনোলজির কিছু শক্তিশালী মডুলেটর ব্যবহার করেও কোনও ফল পাচ্ছেনা রামিন।
আজ ইমি প্রিনিস রামিন কে একটা মিটিং এ ডেকেছিল তার মুখ থেকে তার গবেষণার খোঁজখবর নেওয়ার জন্যে। আজ ভালভাবে খেয়াল করেছে রামিন সাইবর্গটাকে। চোখের দৃষ্টি খুব বেশি তীক্ষ্ণ,শান্ত সাবলীল চেহারা। রামিন মিটিং শেষে চলে আসে। ইমি প্রিনিস এর কোথায় যেন বড় রকমের একটা অস্বাভাবিকতা মনে হয় রামিনের। কিন্তু সেটা কি তা বুঝতে পারেনা। আসে। মনটা খুব উশখুস করতে থাকে।

 চলবে ...


Credit By : Biggan Bangla

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

বেশি বার পড়া হয়েছে

একজন রিক্সা-ওয়ালা