মনে আছে?

 

মনে আছে?

 

এই ছবিটার কথা মনে আছে আপনাদের?

থ্রি-ইডিয়টস মুভির সেই জয়ের কথা মনে আছে? যে কিনা ড্রোন বানিয়েছিলো তার ক্রিয়েটিভিটি দিয়ে, কিন্তু তার টিচার তাকে উৎসাহ না দিয়ে তার বানানো ড্রোন টা ডাস্টবিনে ফেলে দেয় এবং তার বাবাকে ফোন করে জয়ের ফেইল করার সংবাদ শোনায়। রাগে,ক্ষোভে, অভিমানে জয় আত্মহত্যা করে! ‘’Give me sunshine’’.. গান টার লিরিক্স গুলোতে জয় বুঝিয়ে দেয় মানুষ ডিপ্রেশনে থাকলে কি কি করতে পারে।

এবার ভাবুনতো আপনার নিজের কথা, আপনার ভার্সিটির টিচারদের কথা। একটু গভীরভাবে ভেবে দেখুনতো, আপনার ডিপার্টমেন্টে আপনার পরিচিত যে ক্লাসমেটের সিজিপিএ অনেক খারাপ কিংবা সে সবার সাথে তাল মিলিয়ে কুলিয়ে উঠতে পারতেছে না ডিপার্টমেন্টে, তার খোঁজ কখনো ভার্সিটির টিচার নিয়েছে? একটিবার বলেছে যে, তোমার এই অবস্থা কেন, কি হয়েছে আমাকে খুলে বলো, তুমি ক্লাসে বিষণ্ন হয়ে চুপচাপ থাকো কেন? নিয়েছে খোঁজ?? এই কথাটা কারো কাছ থেকে শুনেছেন?

আমি নিজেও প্রচন্ড ডিপ্রেশনে ভুগেছি ভার্সিটিতে এসে। টানা কয়েকরাত জেগে ছিলাম। ঘুমাতে পারিনি সারারাত। নিজের ক্যারিয়ার, সামগ্রিক জীবনভাবনা, আর্থিক অবস্থা, সহযোগীতা না পাওয়া, এসব নিয়ে খুবই ডিপ্রেশনে ছিলাম। ওই সময়টাতে মনে হতো আমার জীবনেরতো কোনো মূল্য নেই। বেঁচে থেকে লাভ কী বা কারো বোঝা হয়ে যাচ্ছি নাতো! মানুষের এতো এতো প্রত্যাশা আমার কাছ থেকে, পরিবার-আত্মীয় সবার প্রত্যাশা আমি পূরণ করতে পারবতো? যাইহোক একটা সময় সেই ডিপ্রেশনটা কাটিয়ে উঠেছি। কাউকে বুঝতেও দেইনি, আর কেউ এতকিছু খোঁজ নেয়ার মতও ছিলো না।



আপনার আশেপাশে দেখুন, আপনার ডিপার্টমেন্টে, আপনার রুমে আরো কতো মারাত্মক ডিপ্রেশনে ভোগা মানুষ আছে। এদের খোঁজ কেউ নেয়! এদের কেউ কেউ হয়তো আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নিয়েও আবার ফিরে এসেছে পরিবার-ধর্ম-সমাজ এসবের কারনে। কিন্তু একটা সময় এরা জীবনের উপর চরম নিরাশ হয়ে পড়বে, বেঁচে থাকার মূল্যটা তারা বুঝবে না। এদেরকে নিয়ে কেউ ভেবেছে? না আপনি, না আপনার টিচার, না আপনার সহপাঠী, না বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ? কারো সময় নেই, সবাই ছুটছে নিজ নিজ ব্যস্ততা নিয়ে। তারপর খবর বেরোয় আজকে অমুক আত্মহত্যা করেছে, কালকে অন্যজন করেছে। সংবাদপত্রে নিউজ বের হয় বড় বড় হেডলাইনে, সবাই সমবেদনা জানায়, ফেসবুকে মাতম উঠে, চারিদিকে বেদনার গল্পতে ভরে উঠে, কেউবা আত্মহত্যাকারীর ফেসবুক প্রোফাইল ঘুরে আত্মহত্যার কারণ উদঘাটনের মিথ্যা প্রচেষ্টা চালায়! তারপর? কয়েকদিন পরে সবাই ভুলে যায়, অত:পর আবারো আরেকজনের আত্মহত্যার খবর আসে, আবারো সেই একই কেচ্ছা-কাহিনীর বুলি আওড়ানো শুরু করে সবাই।

যে ছেলে বা মেয়েটি ডিপার্টমেন্টে লো-সিজিপিএ নিয়ে চরম হতাশায় ভুগতেছে, তাকে নিয়ে সবাই ঠাট্টা-মশকারি করেন! এতে করে ওই স্টুডেন্ট কতোটা হতাশ হয় কিংবা মনোকষ্ট পায় সেটা কি ভেবে দেখেছেন কখনো?

যে শিক্ষার্থী ডিপার্টমেন্টে ড্রপআউট হয় তাকে নিয়ে একটু ভেবেছেন? নিজ ব্যাচের সাথে টিকে থাকতে না পেরে সে ড্রপআউট হয়ে যখন জুনিয়র ব্যাচের সাথে ক্লাস করে নিজেকে তখন সে অনেক বেশি অপরাধী ভাবতে শুরু করে। জুনিয়রদের সাপোর্ট পায় না, কিংবা তাদের সাথে মেলা-মেশা করতে গিয়ে সে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারে না। অনেকে তার দিকে অবহেলা আর তুচ্ছ-তাচ্চিল্যের দৃষ্টিতে তাকায়। আর তখনই চরম হতাশা এসে তার ঘাড়ে ভীড় করে। সে নিজেকে বোঝা মূল্যহীন ভাবতে শুরু করে।

আমি আমার ডিপার্টমেন্ট নিয়ে কখনোই কিছু বলতে চাই না সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। কিন্তু নিজচোখে এটা দেখেছি যে, কিভাবে বছরের পর বছর ড্রপআউট হয়ে যাওয়া কয়েক ব্যাচ সিনিয়র ভাই'টা জুনিয়রদের সাথে ক্লাস করে। ঠিক ক্লাসরুমের পিছনের দিকটাতে কিভাবে বসে থাকে জড়োসড়ো হয়ে হতাশ চোখে।

প্রেমের সম্পর্কে বিচ্ছেদ কিংবা ভবিষ্যত ক্যারিয়ার নিয়ে চিন্তিত-হতাশ, আর্থিক টানাপোড়েন এসবের কারনেও অনেকে আত্মহত্যা করে। এদেরকে বাঁচানোটা আপনার কর্তব্য। আপনার একটু সাপোর্টই পারে এদেরকে ঘুরে দাঁড়ানোর সাহস যোগাতে। কারো প্রেমে বিচ্ছেদ হলে প্লিজ তাকে নিয়ে হাসি-ঠাট্টা করবেন না, তাকে সাপোর্ট দিন, বুঝিয়ে বলুন সবকিছু। মানবীয় সম্পর্কগুলোতে বিচ্ছেদ একটা প্রাকৃতিক নিয়মই বটে!

এই ক্যাম্পাসে, এই বিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে সপ্তাহে - দিন ট্রিট চাওয়া বন্ধুর অভাব হয় না, কিন্তু মনের দু:-কষ্ট শেয়ার করার মতো বন্ধুর বড্ড অভাব এখানে! হতাশার সময় বুকপকেটে জমে থাকা দীর্ঘশ্বাসের সাথে চাপা কষ্টগুলো ধৈর্য ধরে শোনার মতো মানুষের বড্ড অভাব।

 

 

পাবলিকিয়ান

-কালেক্টেড

 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

বেশি বার পড়া হয়েছে

একজন রিক্সা-ওয়ালা